পৌর নির্বাচন ঘিরে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত

চট্টগ্রামের পটিয়ায় হঠাৎ করে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে। পৌর সদর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের বেপরোয়া তৎপরতা স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে। এক একটা গ্রুপে ২০-৩০ জন কিশোর জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। সম্প্রতি পৌর সদরের রেল স্টেশন এলাকায় একটি মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ভাইরাল হলে কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি প্রকাশ পায়।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে পটিয়া পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা এখন মাঠে ব্যস্ত। কিন্তু নির্বাচনী মাঠে শুরু হয়ে গেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের অস্ত্রের মহড়া।

বুধবার রাত সাড়ে দশটার দিকে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গোবিন্দারখীল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দুপক্ষের মধ্যে মোবাইল ছিনতাই নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে গুরুতর আহত গোবিন্দারখীল এলাকার আবু ছৈয়দের পুত্র সজীব (২২) ও একই এলাকার আবদুস ছবুরের পুত্র মুজিবুর রহমান (৫০) বর্তমানে পটিয়া হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে আহত অন্যদের নাম পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। তাদের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। উপজেলার আশিয়া এলাকা থেকে এক যুবক গোবিন্দারখীল এলাকায় বেড়াতে আসেন। ওই এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের কিছু যুবক তাকে মারধর করে মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। এর জের ধরে এলাকার দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পটিয়া থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কিশোর গ্যাংয়ের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এ ব্যাপারে কাউন্সিলর আবদুল মান্নান জানান, মোবাইল ও টাকা ছিনতাইয়ের জের ধরে কিছু যুবকের মধ্যে মারামারি হয়েছে।

পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানান, মোবাইল নিয়ে কিছু যুবকের সাথে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাননি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের বেশিরভাগ সদস্য বিভিন্ন দলের কর্মী। তাদের হাতে এলাকার ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ অনেকটা জিম্মি। পটিয়া বাসস্টেশন, স্টেশন রোড, ক্লাব রোড, রেল স্টেশন, আবদুর রহমান স্কুল, খলিলুর রহমান স্কুল, বাহুলী, পাইকপাড়া, পটিয়া বাইপাসের বাকখালী-বড়ুয়া পাড়া, বাইপাসের ইন্দ্রপুল এলাকা ও মুন্সেফ বাজারের আশেপাশে কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা উদ্বেগজনক।

এছাড়া উপজেলার হাইদগাঁও, কেলিশহর, শোভনদন্ডী, কচুয়াই, বড়লিয়া, ছনহরা, ধলঘাট, খরনা, জঙ্গলখাইন, হাবিলাসদ্বীপ, কোলাগাঁও, জিরি, আশিয়া, কাশিয়াইশসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে কিশোর গ্যাং ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। এসব গ্যাং সদস্যদের কাছে নম্বরবিহীন বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল রয়েছে। এসব মোটরসাইকেলের বিকট শব্দে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কিশোর গ্যাংয়ের অনেকে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পটিয়া থানা পুলিশ। তবে অভিযোগ রয়েছে, কোনও অপরাধী গ্রেপ্তার হলে থানায় বা কোর্টে জামিনের জন্য কিছু অসাধু নেতা ও জনপ্রতিনিধি তাদের ছাড়িযে নিতে লবিং ও অর্থ ব্যয় করেন। গত কয়েক মাসে পুলিশের অভিযানে এবং বিভিন্ন ভুক্তভোগীর মামলায় বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। পরে জামিনে এসে তারা আবারও অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।

গত বছরের ১০ আগস্ট পটিয়া বাইপাস সড়ক থেকে গ্রেপ্তার হয় কিশোর গ্যাং ডিএক্স গ্রুপের সক্রিয় ছিনতাইকারী একাধিক মামলার আসামি আশিক ওরফে ডিএক্স আশিক। তার বাড়ি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড সোনামিয়া সওদাগরের বাড়িতে। আশিক ১০-১৫ জন মিলে ডিএক্স গ্রুপ নামে একটা নিজস্ব বাহিনী গঠন করে। সবাই কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় ছিনতাইকারি। গত মার্চের একটি ছিনতাই মামলায় পটিয়া বাইপাস সড়ক থেকে গ্রেপ্তার হয় কিশোর গ্যাং ডিএক্স গ্রুপের দুই সদস্য মোহাম্মদ আমান ও সাখাওয়াত হোসেন। তাদের দুজনের বাড়ি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। গত কয়েক মাস আগে গ্রেপ্তার হয় ছিনতাইকারীর মূলহোতা কিশোর গ্যাং লিডার রাজু ওরফে গুলি রাজু। তার বাড়ি পটিয়া পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডে তার নিজস্ব একটি গ্যাং আছে। সে একাধিক মামলার আসামি।

নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দীর্ঘদিন উপজেলা সদরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মহিলাদের উত্যক্ত করে আসছে। এছাড়া উপজেলাজুড়ে একটি শক্তিশালী মোটরসাইকেল চোর চক্র সক্রিয় রয়েছে। গত দুই বছরে উপজেলা শহর ও আবাসিক এলাকা থেকে শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। পুলিশ কয়েকটি মোটরসাইকেল উদ্ধারসহ চোর চক্রের কয়েকজনকে আটকও করেছে। তবে বেশিরভাগ ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে হাট বাজারে কেনাকাটা করতে আসা বাইক চালকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ বিষয়ে পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান বলেন, পটিয়া উপজেলা সদরে কিশোর গ্যাং কিংবা কোনও অপরাধীর স্থান নেই। যারা অপরাধ করবে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকজনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছি। পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে কোন রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারি যে বা যে দলেরই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!