নিজেদের সোনালী যুগে ফেরার প্রচেষ্টায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ক্রিকেট বিশ্বের এককালের মহাপরাক্রমশালী দলের নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওদের ক্রিকেট ইতিহাস অনেক পুরনো। ১৮৮০ সালে কানাডার বিপক্ষে খেলার জন্য সর্বপ্রথম ক্রিকেট দল গঠন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভিন্ন ভিন্ন অনেক দ্বীপদেশ শুধু ক্রিকেটের টানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নাম নিয়ে খেলে।

১৯২৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সদস্য হয় তারা। ১৯২৮ সালে প্রথম টেস্ট খেলার সুযোগ পায় ক্যারিবিয়ানরা। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শুরুর দিনগুলোতে একচেটিয়া দাপট ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। অবাক দৃষ্টিতে সবাই দেখেছে গ্যারি সোবার্স, ক্লাইভ লয়েড, গর্ডন গ্রিনিজ, জোয়েল গার্নার, ভিভ রিচার্ডস, কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস, ব্রায়ান লারাদের ক্রিকেট ম্যাজিক।

কিন্তু এখন তা কেবলই স্মৃতি। তারপরও সেই স্বর্ণযুগকে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খা এখনও জেগে আছে দলের সব খেলোয়াড়ের মনে। টেস্ট র‌্যাংকিংয়ে অষ্টম ও ওয়ানডেতে নবম স্থানই বলে দিচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের বর্তমান হালচাল।

৩১ মে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে ক্যারিবীয়রা। খেলা হবে নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশি দাপট ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় আসরে। ১৯৭৫-এ সেই সময়ের নামানুযায়ী প্রুডেনশিয়াল কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের দাপুটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ফাইনালে ক্যারিবীয়রা অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে ১৭ রানে। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় আসরে আবারও ক্যারিবিয়ান ম্যাজিক। এবার ফাইনালে তারা হারায় ইংল্যান্ডকে ৯২ রানের ব্যবধানে। টানা তৃতীয় শিরোপা জয়ের নেশায় পরের বিশ্বকাপেও (১৯৮৩ সালে) ওয়েস্ট ইন্ডিজ উঠে যায় ফাইনালে।

এবারের প্রতিপক্ষ এশিয়ার প্রতিনিধি ভারত; কিন্তু সবাইকে অবাক করে কপিল দেবের ভারত মাত্র ১৮৩ রান করেও তুলে নেয় ৪৩ রানের জয়। অথচ মানে-গুণে ভারতের চেয়ে তখনকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল হাজারগুণ ভালো।

১৯৮৭ বিশ্বকাপে প্রথমবারে মতো বড় ব্যর্থতার মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচে হেরে সেখান থেকেই ফিরে যেতে হলো তাদের। শুরু হলো বিশ্বকাপে সাম্রাজ্য পতনের ইতিহাস। ১৯৯২ বিশ্বকাপেও আগের আসরের পুনরাবৃত্তি ঘটে।

গ্রুপ পর্বের আট খেলার চারটিতেই হেরে গিয়ে পরের রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হয় দু’বারের চ্যাম্পিয়নরা। তবে প্রাপ্তির খাতা একেবারেই শূন্য ছিল না। কারণ এ বিশ্বকাপেই ব্রায়ান লারা নামক এক ক্রিকেটারের অতিমানবীয় ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করল গোটা ক্রিকেট জগৎ।

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলো ক্যারিবিয়ানদের জন্য। গ্রুপ পর্বের বাধা পেরিয়ে এবার তারা কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকার। সেখানে ১৯ রানে প্রোটিয়াদের হারিয়ে শেষ চারে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু এখানেই শেষ। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৫ রানে হেরে যায় তারা।

প্রথম দুই আসরের পর ষষ্ঠ আসরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঝলক শেষবারের মতো দেখেছিল সবাই। পরেরবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে আবার ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা। এবারও সুপার সিক্সে উঠতে ব্যর্থ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৩ বিশ্বকাপেও একই চিত্র। ২০০৭ সালের নিজেদের মাটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা কিছুটা হলেও শান্তি দিয়েছে সমর্থকদের। ‘ডি’ গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে সুপার এইটে উঠে তারা। কিন্তু এর বেশি আর এগোতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

২০১১ সালে বাংলাদেশ, ভারত এবং শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পড়েছিল ‘বি’ গ্রুপে। দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস ছিল তাদের প্রতিপক্ষ। গ্রুপ পর্বে মিরপুরে স্বাগতিক বাংলাদেশকে ৫৮ রানে অলআউট করে দিয়ে হইচই ফেলে দেয় ক্যারিবীয়রা।

ড্যারেন স্যামির নেতৃত্বে গ্রুপে চতুর্থ দল হিসেবে ওঠে কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় ক্যারিবীয়দের। পাকিস্তানি বোলারদের সামনে মাত্র ১১২ রানে অলআউট হয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। পাকিস্তান জিতে যায় ১০ উইকেটের ব্যবধানে।

২০১৫ বিশ্বকাপেও একই অবস্থা। কোয়ার্টার ফাইনালই ছিল ক্যারিবীয়দের শেষ যাত্রা। ‘বি’ গ্রুপে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, আরব আমিরাতকে পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে তিন ম্যাচ জিতে কোনোমতে উঠলো কোয়ার্টার ফাইনালে। কোয়ার্টারে নিউজিল্যান্ড করেছিল ৩৯৩ রান। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট ২৫০ রানে। বিদায় নেয় ক্যারিবীয়রা।
নিজেদের সোনালী যুগে ফেরার প্রচেষ্টায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ 1
বর্তমান এ দলটির অধিনায়কের দায়িত্বে জ্যাসন হোল্ডার। গত বিশ্বকাপেও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। টানা দুই বিশ্বকাপে অধিনায়ক তিনি। র‌্যাংকিংয়ে ৯ নম্বরে থাকলেও এই ক্যারিবিয়ানরা ভয়ঙ্কর। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তারা যেভাবে জিতেছে, সেই বিধ্বংসী রূপ যদি এবারও ফিরে আসে, তাহলে অন্যদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া উপায় থাকবে না।

কারণ, ক্যারিবীয়দের এই দলটিতে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল। আইপিএলের কল্যানে আরেক বিধ্বংসী অলরাউন্ডার হলেন আন্দ্রে রাসেল। যে কোনো সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম তিনি। রয়েছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ার, সাই হোপ, এভিন লুইস, ড্যারেন ব্র্যাভো, নিকোলাস পুরান।

পেসারদের মধ্যে অধিনায়ক হোল্ডারছাড়াও রয়েছেন গতি তারকা ওশানে থমাস, কেমার রোচ, শেলডন কটরেল, শ্যান গ্যাব্রিয়েল, পেস অলরাউন্ডার কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, স্পিনার অ্যাশলে নার্স, ফ্যাবিয়েন অ্যালেন। এই দলটি সত্যি সত্যি যদি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলে, তাহলে ইংল্যান্ড থেকে আরেকটি শিরোপা জয় করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্দ ওয়েস্ট ইন্ডিজ মোট ওয়ানডে খেলেছে ৭৯৪টি। এর ভেতর জয় পেয়েছে তারা ৩৯০টি ম্যাচে। হেরেছে ৩৬৬ ম্যাচে। ম্যাচ টাই হয়েছে ১০টি। আর ২৮টিতে কোনো ফলই হয়নি। এখনও পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেছেন ১১৪জন ক্রিকেটার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোয়াড:
জেসন হোল্ডার (অধিনায়ক), ফ্যাবিয়েন অ্যালেন, ড্যারেন ব্রাভো, কার্লোস ব্রেথওয়েট, শেলডন কোট্রেল, শেনন গ্যাব্রিয়েল, ক্রিস গেইল, সিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ (উইকেটরক্ষক), এভিন লুইস, অ্যাশলে নার্স, নিকোলাস পুরান, কেমার রোচ, আন্দ্রে রাসেল, ওসানে থমাস।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!