জন্মনিবন্ধনে ভুল, স্কুল শিক্ষার্থী গলায় দড়ি দিল জেএসসির রেজিস্ট্রেশন করতে না পেরে

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় তিনদিন ধরে তিন অফিসে ঘুরেও জন্ম তারিখ সংশোধন করতে না পেরে অবশেষে আত্মহত্যা করলেন চাতরীর কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী দুর্জয় দাশ। সোমবার (২৯ জুন) রাতে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের কৈনপুরা জলদাশপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। দুর্জয় দাশ জলদাশপাড়ার মিলন দাশের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, দুর্জয় দাশ কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম চললেও করোনা পরিস্থিতির কারণে দুর্জয় বিষয়টা জেনেছে অনেক পরে। যখন জেনেছে তখন তার হাতে সময় ছিল মাত্র ৪ দিন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে জানতে পারে জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী তার বয়স তিন বছর বেশি। ফলে তার রেজিস্ট্রেশন হবে না। এটা শোনার পর সে বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। প্রথমে চাতরী ইউনিয়নের তথ্য সেবাকেন্দ্রে গেলে সেখান থেকে তাকে বলা হয় স্কুল থেকে একটা প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আসতে। দুর্জয় দ্রুত টাকা নিয়ে প্রত্যয়নপত্রের জন্য কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে যায়। প্রধান শিক্ষক ২০০ টাকার বিনিময়ে তাকে প্রত্যয়নপত্র দিলেও সেখানেও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দেওয়া ১৮ ডিসেম্বর ২০০৩ সাল উল্লেখ থাকা। প্রত্যয়নপত্রটি নিয়ে সে ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রে গেলে তারা সাফ জানিয়ে দেয় এটি নতুন করে সংশোধন হবে না।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র থেকে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে আনতে বলেন। এদিকে স্কুল থেকে জানানো হয় ৩০ জুনের পর রেজিস্ট্রেশন আর হবে না। দুর্জয় দাশ এই অফিস থেকে ওই অফিসে ঘোরাঘুরি করে জন্মনিবন্ধন সংশোধন এবং জেএসসির রেজিস্ট্রেশন করতে না পেরে ক্ষোভে আর অভিমানে অবশেষে আত্মহত্যা করে।

দুর্জয়ের ছোট বোন পুষ্প দাশ বলেন, বিকেলে আমি ভাইয়াকে খুঁজতে গিয়ে ঘরের সঙ্গে রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখি। সঙ্গে সঙ্গে আমি দা দিয়ে রশি কেটে ভাইয়াকে কাটে শোয়ায়।

দুর্জয় দাশের পিতা মিলন দাশ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, গরীব হলেও বড় আশা ছিল ছেলেকে লেখাপড়া করানোর। আমরা অশিক্ষিত মানুষ জন্মনিবন্ধন সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। বড় ছেলেটাকে অভাবের কারণে বেশি লেখাপড়া করাতে না পেরে গার্মেন্টসে চাকরি দিয়েছি। আমার ছেলের বয়স ১৩ বছরের বেশি নয়। কাগজে কি লিখল জানি না। স্কুল থেকে বলেছে বয়স বেশি তাই ঠিক করতে না পারলে রেজিস্ট্রেশন হবে না। আমার ছেলেটা বিভিন্ন অফিসে গিয়েও সোমবার বিকালে আমাকে জানাল সংশোধন করতে পারেনি এবং স্কুল থেকে বলেছে জেএসসি পরীক্ষাও দিতে পারবে না । কিছুক্ষণ পর শুনলাম ছেলে আত্মহত্যা করেছে।

কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু চন্দ্র দেবনাথ বলেন, বয়সের ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা আছে। ওই শিক্ষার্থীর বয়স জন্মনিবন্ধন ও পিএসসি সনদে বেশি হওয়ায় তাকে তা সংশোধন করে আনতে বলেছি। বেশি বয়সে কেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করালেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তখন আমরা এটা খেয়াল করিনি।

আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, কৈনপুরা এলাকায় স্কুলছাত্র আত্মহত্যার বিষটি শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে থানা কোনো অভিযোগ হয় নি।

এদিকে আদরের সন্তান দুর্জয় দাশকে হারিয়ে তার বাবা-মা পাগল প্রায়। মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায় স্বজনরা তাদের শান্তনা দেওয়ার চেষ্ঠা করেও ব্যর্থ হয়।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!