ছয় গুণ বেড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা ৫০ নটিক্যাল মাইল

চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা ছয় গুণ বেড়ে ৫০ নটিক্যাল মাইল হয়েছে। আগে বন্দরের সীমানা ছিলো সাড়ে সাত নটিক্যাল মাইল। পতেঙ্গা বহির্নোঙ্গর থেকে সরাসরি মহেশখালী হয়ে সীতাকুণ্ড সাগর এলাকা পর্যন্ত বেড়েছে জলসীমা। এছাড়াও একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা যাওয়ার উপযোগিতা বেড়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক আয় এক কোটি টাকারও বেশি হবে বলে আশা করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা বাড়ানোর প্রস্তাবটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পর আইন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদিত হয়। সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন শেষে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। রাষ্ট্রপতির জারিকৃত বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে বর্ধিত বন্দরসীমায় আসা জাহাজের বকেয়াসহ অন্যান্য চার্জ আদায় করতে বুধবার (৩ এপ্রিল) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় পাঁচ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্তগুলো হলো শীঘ্রই বন্দর সীমানায় এআইএস ও ভিএইচএফ নেটওয়ার্ক সৃষ্টির মাধ্যমে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া, বর্ধিত বন্দর জলসীমায় অবস্থানরত জাহাজ থেকে বকেয়াসহ অন্যান্য সকল চার্জ আদায়ের জন্য লাইসেন্স অফিস স্থাপন করা, পোর্ট লিমিট সম্পর্কিত সরকারি গেজেট প্রচারের তারিখ থেকে ওই এলাকায় আসা জাহাজগুলোর তালিকা চেয়ে কোস্টগার্ড বরাবর চিঠি পাঠানো, বর্ধিত জলসীমায় স্থাপিত সকল বন্দর স্থাপনার সঙ্গে বার্থহায়ার চার্জ এবং অন্যান্য চার্জ ভাগাভাগির বিষয়ে অপারেশনাল চুক্তি সম্পাদন এবং চবক-এর বর্ধিত বহির্নোঙ্গর সংলগ্ন এলাকা বিশেষত কুতুবদিয়া, মাতারবাড়ি, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই এলাকায় নৌ-টহলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোস্টগার্ড বরাবরে চিঠি প্রেরণ।

চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পূর্বের জলসীমা কম থাকায় বিদেশি জাহাজগুলো বন্দরের মাসুল দিতো না। সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরও বিদেশি জাহাজগুলো মাসুল না দেওয়ায় বন্দর কতৃপক্ষ প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হতো। বর্তমানে সীমানা ছয় গুণ বেড়ে যাওযায় বন্দরের মাসুল আদায়ের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে। সে অনুযায়ী বন্দর দৈনিক এক কোটি টাকার বেশি মাসুল আদায় করতে সক্ষম হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের কারণে প্রতিবছর পণ্যবাহী জাহাজ আসা যাওয়ার পরিমাণও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই চাপ সামাল দিতে বন্দরের সীমানা বাড়ানো জরুরি ছিল। সেই সাথে মহেশখালীর মাতারবাড়ি ঘিরে এলএনজি টার্মিনাল, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা-এর নির্মিতব্য মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর এবং কুতুবদিয়ার গভীর সাগর দিয়ে জাহাজ আসছিল। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আনোয়ারা এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ আসা যাওয়ার সুবিধার্থেও এই সীমানা বাড়ানো হয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতা জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি যুগান্তকারী। এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে আমুল পরিবর্তন আসবে। চট্টগ্রাম বন্দরের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা বৃদ্ধির কারণে বন্দরের সক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে সেই সাথে বন্দরের আয়ও বাড়ছে। বন্দরকে ঘিরে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণেই এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, শুরুর দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমানা ছিল বহির্নোঙ্গরের পাঁচ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত। জাহাজ আসা বেড়ে যাওয়ায় ২০১১ সালে সেটি সাত নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন সেই সীমানা বেড়ে গিয়ে ৫০ নটিক্যাল মাইল হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!