‘ছোট বড় সৈনিক’ নিয়ে মেছোবাঘ পিটিয়ে মেরে ফেসবুকে যুবলীগ নেতার বাহাদুরি

জনাত্রিশেক মানুষ ঘণ্টাখানেক ধাওয়া করে ধরার পর একটি বিপন্ন প্রজাতির মেছোবাঘকে হত্যা করেছে পিটিয়ে পিটিয়েে। শুক্রবার (১৭ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটল। মেছোবাঘটি দৈর্ঘ্যে প্রায় আড়াই ফুট ও উচ্চতায় দেড় ফুট বলে জানিয়েছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা।

স্থানীয়রা বলছেন, বনবিভাগের উদাসীনতায় নিয়মিতভাবে এভাবে বিপন্ন প্রজাতির এই প্রাণীটি নিধন হচ্ছে সন্দ্বীপে। প্রতিবছর ৮-১০টি করে মেছোবাঘ হত্যা করা হলেও কোনো ঘটনায় সামান্য পদক্ষেপ নেয়নি বনবিভাগ। এমনকি বনবিভাগের দায়িত্বশীলরা সন্দ্বীপেই থাকেন না বলেও অভিযোগ তাদের।

শুধু তাই নয়, হত্যার পর মেছোবাঘটিকে নিয়ে নানা ঢংয়ে ছবিও তুলেছেন স্থানীয়রা। এর কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন সন্দ্বীপ পৌরসভা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাউছার মাহমুদ দিদার। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের বাড়ির ছোট বড় সৈনিক নিয়ে এইমাত্র একটি বাঘডাশ মারা হলো। মানুষের ছাগল, ভেড়া, হাস, মুরগি অনেক খেয়ে ফেলতো।’

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে যুবলীগ নেতা দিদার বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই এই মেছোবাঘটি এলাকার বিভিন্নজনের হাস-মুরগি খেয়ে ফেলেছে। এমনকি স্থানীয়রা চলাচলের পথেও মাঝে মাঝে এটি সামনে দাঁড়িয়েছে। আমরা এলাকার ছোট শিশুদের নিয়েও অনিরাপদবোধ করছিলাম। এ জন্য আজ দুপুরে সবাই মিলে এটিকে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলেছি।’

‘ছোট বড় সৈনিক’ নিয়ে মেছোবাঘ পিটিয়ে মেরে ফেসবুকে যুবলীগ নেতার বাহাদুরি 1

দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এ ধরনের মেছোবাঘ একসময় প্রচুর দেখা গেলেও এখন বন-জঙ্গলের পরিধি কমার সঙ্গে সঙ্গে এ প্রজাতিও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রকৃতি সংরক্ষণের জোট আইইউসিএন ২০০৮ সালে এ প্রজাতিকে বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবছর ৮-১০টি মেছোবাঘ হত্যা করা হয় সন্দ্বীপে। বিপন্ন প্রজাতির এই প্রাণীটি সন্দ্বীপে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রয়েছে জানিয়ে এসব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বনবিভাগের দায়িত্বশীলরা কোনো ভূমিকা রাখছেন না বলে অভিযোগ তাদের।

বনবিভাগের সন্দ্বীপ রেঞ্জের কর্মকর্তা মিজান উদ্দিন বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি খোঁজখবর নেবো। তথ্যপ্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে দায়িত্বপালনে অবহেলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখুন আমরা প্রায়ই এমন অভিযোগ পাই। তবে সরেজমিনে গিয়ে এসবের সত্যতা পাই না। মামলা করার এলিমেন্ট পাই না। তাই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে উঠে না।’

তবে স্থানীয় জনসাধারণ বনবিভাগের পক্ষ থেকে ‘তদন্তে’ যাওয়ার এই দাবিকে একেবারেই অসত্য বলে দাবি করছে।

এআরটি/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!