চুয়েটে বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে ছাত্রলীগ, শেষরাতেও আহত একজন (ভিডিও)

বারবার সংঘর্ষে জড়াচ্ছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই গ্রুপ। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) মধ্যরাতেও তৃতীয় দফায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন এক ছাত্রলীগ কর্মী। ক্যাম্পাসে এ নিয়ে শুক্রবার (১৮ মার্চ) দিনভর উত্তেজনা ছিল। এর জের ধরে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় হলের মেইন গেট ও হল ক্যান্টিনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে চুয়েটের শেখ রাসেল হলে হঠাৎ শোরগোল শুরু হয়। এর একপর্যায়ে শহীদ তারেক হুদা হল ও শহীদ মোহাম্মদ শাহ হলের কতিপয় ছাত্রলীগ কর্মী ছুরি-কিরিচের মতো দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটাসহ প্রবেশ করে। এরপর হলে অনেক জোরে আওয়াজ হতে থাকে। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীদের ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই চুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাকিব উদ্দিন চৌধুরীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।

পরে দ্রুত তাকে চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে চুয়েট মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। সেখানে তার মাথায় কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

আহত রাকিব উদ্দীন চৌধুরীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি রাতে হলেই অবস্থান করছিলাম। হঠাত শহীদ মোহাম্মদ শাহ হল ও শহীদ তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগ কর্মী ’১৬ ব্যাচের নিশান, রাম, রিফাত, ’১৭ ব্যাচের প্রিয়ম, কাব্য, রুম্মান ও ’১৮ ব্যাচের মুন্না, তৌফিক, নিরব, রাজিনসহ আরও অনেকে এসে এলোপাতাড়ি আমার ওপর হামলা করেন। এক পর্যায়ে তারা আমার মাথায় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। এতে আমি রক্তাক্ত হয়ে যাই।’

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করেন শহীদ তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগ নেতা ও চুয়েট শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইফফাত হক নিশান বলেন, ‘রাকিবের সকল অভিযোগ বানোয়াট ও মিথ্যে। আমাদের কোনো ছাত্রলীগ কর্মী সেখানে যায়নি।’

শহীদ মোহাম্মদ শাহ হলের ছাত্রলীগ কর্মী সাফকাত আর রুম্মান বলেন, ‘ওই হামলা কে বা কারা করেছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাদের কারও দ্বারা এ কাজ হয়নি।’

এর আগে ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত একজন আহত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওইদিন বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দেওয়ার সময় এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১২টায় শেখ রাসেল ও তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগের প্রায় ৫০ জন সদস্য ফুল দেওয়ার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের সামনে জড়ো হন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির সূত্রপাত হয়।

শেখ রাসেল হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় শহীদ তারেক হুদা হলের শিক্ষার্থী আজহারুল ইসলাম মাহমুদ মুন্না তাদের ধাক্কা দেয়।

অন্যদিকে তারেক হুদা হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা বলেন, ওইদিন বেলা ৩টা নাগাদ তারেক হুদা হলের আজহারুল ইসলাম মাহমুদ মুন্না নামক এক শিক্ষার্থীকে শেখ রাসেল হলের ক্যান্টিনে মারধর করা হয়েছে। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ রাসেল হলের ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, ক্যান্টিনে মুন্না আমাদের সকালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমরা তাকে থামানোর চেষ্টা করি। একপর্যায়ে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। এরপর সে তারেক হুদা হলের দিক থেকে বেশকিছু শিক্ষার্থীসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে শেখ রাসেল হলের দিকে আসতে থাকে। তারা শেখ রাসেল হলের গেটে ভাঙচুর করারও চেষ্টা চালায়।

এ ব্যাপারে আজহারুল ইসলাম মাহমুদ মুন্নার সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

চুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগার সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের ঘটনার বিষয়ে বলেন, পর পর তিনবার এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। শান্ত ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। আমার মনে হচ্ছে এখানে বাইরের কারও ইন্ধন থাকতেও পারে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা সাংগঠনিকভাবে দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা করব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ছাত্রলীগের তৃতীয় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা বৃহস্পতিবার রাতে সংঘটিত হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!