চসিকের কাউন্সিলর হতে চান ৫ ‘কিশোর গ্যাং’ লিডার

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনপ্রতিনিধির তাকমা গায়ে লাগতে মরিয়া হয়ে আছেন কিশোর গ্যাংয়ের আলোচিত বড় ভাইরাও। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করছেন তারা। এদের মধ্যে কারাগারে থেকেও নির্বাচন করছেন একজন। তবে কিশোরদের অপরাধমূলক কাজে জড়িত করার অভিযোগে অভিযুক্ত এসব বড় ভাইয়েরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ব্যাহত হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।

আবার সচেতন নাগরিকেরা বলছেন এ ধরনের কেউ যদি জনপ্রতিনিধি হয়ে যায় তাহলে দীর্ঘমেয়াদে সমাজের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে বড় ভাইয়েরা বলছেন তারা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের শিকার। মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এসব বিশেষণ জুড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে।

চসিকের ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করছেন এসরারুল হক এসরাল। কোন পদ-পদবী না থাকলেও নিজেকে মহানগর যুবলীগের নেতা হিসেবে দাবি করে আসা এসরালের বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং চালানোর অভিযোগ রয়েছে। নগরীর বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, শমশেরপাড়া, কালুরঘাট ও পাঁচলাইশ এলাকায় তার গ্যাংয়ের আধিপত্যের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। জায়গা-জমি দখল ও নির্মাণাধীন ভবন থেকে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে কিশোর গ্যাংযের দৌরত্মও খুব আলোচিত। সেখানে দুই নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে কিশোর গ্যাং চালানোর অভিযোগ। তাদের একজন আবু হাসনাত বেলাল এবার আওয়ামী লীগ থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। অন্যজন দিদারুল আলম মাসুমও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে। এছাড়া ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসার সামনে খুন হওয়া নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলায়ও জড়িয়ে গেছে দিদারুল আলম মাসুমের নাম। এ মামলায় দুইবার কারাবরণও করেছেন মাসুম। এ দুই নেতার গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে লালখান বাজারের দোকান ও মার্কেট থেকে প্রায় নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে চাঁদা আদায়, লালখান বাজার মোড় ও বাঘঘোনা এলাকার ভাসমান দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়, পাহাড় কেটে ঘর ভাড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া অন্তত ১৭টি খুনে এ এলাকার সন্ত্রাসীদের নাম উঠে এসেছে।

অন্যদিকে জেলে থেকে নির্বাচন করছেন চকবাজার এলাকার আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ নুর মোস্তফা টিনু। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা এই টিনুর বিরুদ্ধেও রয়েছে কিশোর গ্যাং চালানোর অভিযোগ। গত বছরের এপ্রিলে এক স্কুল ছাত্রীকে উত্যাক্ত করার জেরে গোলপাহাড় এলাকার যুবলীগ কর্মী এমএইচ লোকমান রনি নিহত হন স্থানীয় সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলামের গুলিতে। এর দুই দিন পর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় সাইফুল। সে নূর মোস্তফা টিনুর অনুসারী। এছাড়া ছিনতাইয়ের ঘটনায়ও বিভিন্ন সময় টিনুর অনুসারীরা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। এ গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে- সাদ্দাম হোসেন ইভান, কায়সার হামিদ, লম্বা নাসির, শাহাদাত হোসেন ল্যাংড়া রিফাত, আহাদ, অভি, অভীক দাশগুপ্ত, রবিউল ইসলাম রাজু, গুলি বাপ্পা, জসীম উদ্দিন ওরফে বাইক জসীম, জুলকাছ, ইমাম রশীদ সাঈদ, শেখ আমির, রুবেল ওরফে জামাই রুবেল, সৌরভ উদ্দিন বাপ্পা ও জয়নাল আবেদীন। তাদের মধ্যে জয়নাল আবেদীনকে ৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। রুবেল ও বাপ্পাও ওই ছিনতাই ঘটনায় জড়িত ছিল।

গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকা থেকে নুর মোস্তফা টিনুকে গ্রেপ্তার র‍্যাব। এরপর তার বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি শর্টগান ও ৬৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। নুর মোস্তফা টিনুর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করার পর তাকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কারাগারে রয়েছেন নুর মোস্তফা টিনু।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ দিন নুর মোস্তফা টিনুর স্ত্রী তার পক্ষে মনোনয়ন ফরম জমা দেন।

আবু হাসনাত মো. বেলাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে লালখানবাজার এলাকায় রাজনীতি করি। আমার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই। আমার বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং পরিচালনার অভিযোগ কেন আসলো জানি না। এটি সত্য আমরা ছাত্ররাজনীতি সংগঠিত করতে কাজ করেছি দীর্ঘদিন। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি সংগঠিত করা আর কিশোর গ্যাং করাতো এক না। গ্যাং করে মানুষ বৈষয়িক সুবিধা নেওয়ার জন্য। আমার বিরুদ্ধে কোনো বৈষয়িক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগইতো নেই।’

দিদারুল আলম মাসুমের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলে সাড়া মেলেনি।

অন্যদিকে ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধেও ছিল কিশোর গ্যাং পালনের অভিযোগ। এবারের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

তবে কাউন্সিলর জসিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমিতো আওয়ামী লীগ করি, কাউন্সিলরও। আমার এখানেতো কোনো কিশোর নেই। এ বিষয়ে একটা অপপ্রচার হয়েছে। আমি কোনো কিশোর গ্যাং চালাইনি। আমার এলাকাতেও কোনো কিশোর গ্যাং নেই।’


এআরটি/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!