চসিকের উন্নয়ন প্রকল্পে মিডিয়ার সুনজর চাইলেন মেয়র

প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সুনজর চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এসময় তিনি চসিকের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরে সত্যিকারের সুন্দর নগর গড়ে তুলতে সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সহযোগিতা চাইলেন মেয়র।

এসময় সিটি মেয়র বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা জানেন যে, কোন বিষয়ে সরাসরি আমার সাথে কথা বলার সুযোগ আছে। তাছাড়া চসিকের প্রতিটি বিভাগের সবার সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যাপারে চসিক যথেষ্ট আন্তরিক। তাই চলমান চসিকের যে কোন উন্নয়ন প্রকল্পে সবার সাথে কথা বলার সুযোগ আছে। তাই গণমাধ্যমে যে কোন তথ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে চসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তথ্য নিশ্চিত হয়ে তথ্য উপস্থাপনের অনুরোধ করেন তিনি।’

মিডিয়ায় ভুল তথ্য উপস্থাপনের ফলে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, ‘ভুল তথ্য উপস্থাপনের ফলে যদি প্রতিষ্ঠানের (চসিক) দুর্নাম হয় তাহলে আমাদেরই দুর্নাম। এখানে আমরা বলতে আপনি-আমি আমরা সবাই আছি। কাজেই সংবাদ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সবার সুনজর প্রয়োজন।’

তবে চসিকের জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা রয়েছে।’

মেয়র বলেন, ‘নগরের অন্যতম সমস্যা হকার সমস্যা। আমরা একাধিকবার নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হকার উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়েছি। কিন্তু উচ্ছেদের কিছু দিন পর তারা আবার বসে। এক্ষেত্রে সবার সচেতন হতে হবে। ক্রেতা আছে বলেই উচ্ছেদের পরও হকাররা আবার বসছে। এ সংকট সমাধানের ব্যাপারে চসিকের সম্মেলন কক্ষে মেয়য়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে হকার্স নেতাদের সাথে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১০০ ঘন্টা বৈঠক করেছি। কিন্ত পুলিশের অভাবে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সব সময় অভিযান চালাতে পারে না। অন্যদিকে পুলিশেরও সব সময় এ ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ থাকে না। কাজেই এসব ক্ষেত্রে আইনি সীমাদ্ধতা রয়েছে।

এসময় দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন চসিকের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম কাজ করার উপযুক্ত সময়। এ সময়টা কাজে লাগাতে সচেষ্ট আমরা। জাইকা নিজস্ব স্টাইলে কাজ করে। যতক্ষণ কাজ চলে জাইকার লোক থাকে। পোর্ট কানেকটিং সড়কের কাজ শেষ করতে আরও সময় লাগবে। কাজগুলো নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।

মেয়র আরও বলেন, ‘৫৬০ কিমি পিচঢালা সড়ক ৮১৬ কিমিতে, ২২২ কিমি কনক্রিট সড়ক ৩২৮ কিমিতে, ৬৮৩ দশমিক ৫৫ কিমি পাকা নালা ৯৪৬ দশমিক ৫ কিমিতে, ১৪৬ দশমিক ০৭ কিমি ফুটপাত ২৮৭ কিমিতে, ৮০ দশমিক ২০ কিমি প্রতিরোধ দেয়াল ৯৯ কিমিতে, ১৮৮টি ব্রিজ ২১৯টিতে, গভীর নলকূপ ৩৭২টি থেকে ৪২৩টিতে, কালভার্ট ৯৩২টি থেকে ১ হাজার ৪৮টিতে উন্নীত করা হয়েছে। ৭৮ দশমিক ৫৩ কিমি ব্রিক সলিং ৫২ দশমিক ৯৩ কিমি কমিয়ে ২৫ দশমিক ৬ কিমিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। নগরের ৯৫২ কিমি সড়ক বা ৮০ ভাগ আলোকায়নের আওতায় আনা হয়েছে। ১ হাজার ৩০৪ কিমি সড়কে ৬৪ হাজার ৬৮৩টি এলইডি বাতি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

‘এনার্জি বাতি ১১ হাজার ২৩টি থেকে ১৫ হাজার ২৭৩টিতে, এলইডি বাতি ১০০টি থেকে ৪ হাজার ৪০টিতে, মেটাল হ্যালাইড ১৭৫টি থেকে ১৯১টিতে উন্নীত করা হয়েছে। ৩৩ হাজার ২৯৪টি টিউব লাইট কমিয়ে ৩০ হাজার ৩৪৫টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান মেয়র।

অপরিকল্পিত নগরায়নের কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগরায়নের কুফল নগরবাসী ভোগ করছেন। নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিমানবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প নিয়েছি। এখানে বন্দরের জমি লিজ নিয়ে অনেক জ্বালানি স্থাপনা ও তৈলাধার গড়ে তোলা হয়েছে। যা সরানো কঠিন কাজ। সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত দুই পাশে ড্রেন তৈরি করা হচ্ছে। জাইকার অর্থায়ন ও ডিজাইনে পোর্ট কানেকটিং ও এক্সেস রোডের কাজ চলমান। নিমতলা থেকে অলংকার পর্যন্ত ৬ দশমিক ২ কিমি পোর্ট কানেকটিং সড়ক, এক্সেস রোডের কাজে এলইডি লাইটিং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আরাকান সড়কের কাজ ১২টি লটে চলমান আছে। কম সময়ে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

এসময় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, কাউন্সিলর আবিদা আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এএ/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!