চবি শিক্ষক সমিতির ভোটে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা নেই, হলুদ দলের প্রার্থী একাধিক

‘প্রশাসনের ইশারায়’ প্রার্থী অনেকে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে এবারও অংশ নিচ্ছে না বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা। তবে একাধিক পদে হলুদ দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী রোববার (১৯ ডিসেম্বর) ছিল মনোনয়ন নেওয়া এবং জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এতে হলুদ দল থেকে ১১টি পদে পূর্ণ প্যানেল মনোনয়ন জমা দেয়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক সমর্থিত সাদা দল ও সাদা দল থেকে বেরিয়ে আসা বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম থেকে কেউই মনোনয়ন জমা দেননি। তবে সভাপতি, সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে হলুদ দলের প্রার্থীদের বিপরীতে চার জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। যারা সবাই নিজেদেরকে হলুদ দলের বলে দাবি করেছেন। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে।

হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা হলুদ দল থেকে পূর্ণ প্যানেলে ১১ জনকে মনোনয়ন দিয়েছি।’

হলুদ দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কিছু বলার সময় আসেনি। আগামীকাল মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় আছে। আমি আশাবাদী এর মধ্যেই এটার একটা সুরাহা হয়ে যাবে।’

শিক্ষকদের একাংশের নির্বাচন বর্জনের কারণ

জাতীয় নির্বাচন বর্জনের ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনও বর্জন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নসরুল কাদির। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সারাদেশে একই চিত্র। জাতীয় নির্বাচনও বয়কট করা হচ্ছে। তাই আমরাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।

এ দিকে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে সাদা দলের আহ্বায়ক ও ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছি না। বর্তমানে নির্বাচন করার মতো অবস্থা নেই।’

নির্বাচনে প্রার্থী যারা

হলুদ দল থেকে সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাে. হানিফ সিদ্দিকী, সহ-সভাপতি পদে ভূগােল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হক, কোষাধ্যক্ষ পদে চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাে. জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক পদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘােষ, যুগ্ম সম্পাদক পদে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী হেলাল উদ্দিন আহমদ, সদস্য পদে জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের ড. নাজনীন নাহার ইসলাম, বাংলা বিভাগের ড. শারমিন মুস্তারী, সমাজতত্ত্ব বিভাগের মুহাম্মদ শোয়াইব উদ্দিন হায়দার, রসায়ন বিভাগের ফণী ভূষণ বিশ্বাস, পদার্থবিদ্যা বিভাগের সৈয়দা করিমুন্নেছা ও আইন বিভাগের হোছাইন মোহাম্মদ ইউনুছ সিরাজী।

এছাড়া চারটি পদে বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক সেলিনা আখতার, সহ-সভাপতি ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমন বড়ুয়া, কোষাধ্যক্ষ পদে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমন গাঙ্গুলী ও যুগ্ম সম্পাদক পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এসএএম জিয়াউল ইসলাম।

এ দিকে হলুদ দলের বিপরীতে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীদের প্রশাসনের সমর্থনপুষ্ট বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনেট ও হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির একজন সদস্য।

তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তারা প্রশাসনের সমর্থনপুষ্ট। প্রশাসনই তাদেরকে দাঁড় করিয়েছে। তাদের কয়েকজন প্রশাসনিক দায়িত্বেও আছেন।’

তবে নিজেকে হলুদ দলের দাবি করে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক সেলিনা আখতার।

তিনি বলেন, ‘আমি এখনও হলুদ দলে বিলং করি। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার চেতনা ও প্রগতিশীল দলেই আছি। আমি দল থেকে কয়েকবার মনোনয়ন চেয়েছি। কিন্তু আমাকে দেয়া হয়নি। একজন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তবে দলের প্রতি এখনও আমার বিশ্বস্ততা ও ভালোবাসা আছে। এটা আজীবন থাকবে।’

দলের প্রতি বিশ্বস্ত হয়েও দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে কেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জানতে চাইলে অধ্যাপক সেলিনা আখতার বলেন, ‘এর আগে অনেক প্রার্থী আছেন যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ডিন নির্বাচন করেছেন। অন্যান্যবারও এভাবে মানেনি। তবে উপযুক্ত মানুষকে উপযুক্তভাবে না দেয় তাহলে দলের সিদ্ধান্ত তো…। তবে দলকে তো ভালোবাসি। দলের সব সিদ্ধান্ত সারাজীবনই মেনে আসছি। যাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তারা উপযুক্ত না তা বলছি না। কিন্তু বারবার চেয়েও কেন আমাকে এভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে? তাই আমি নিজে নিজেই দাঁড়িয়েছি।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ১১টি পদে ১৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তাদের সবার মনোনয়ন বৈধ। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় আছে। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রার্থীর ওপর ভিত্তি করে আগাম ভোটের সময় নির্ধারণ করা হবে। তবে ভোটগ্রহণ হবে ২৩ ডিসেম্বর।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!