চবিতে অনলাইন ক্লাস শুরু রোববার থেকে, দ্বিধায় শিক্ষার্থীরা

লেকচার ডাউনলোড করার সুবিধাও থাকবে

অবশেষে অনলাইনে ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘদিন সিদ্ধান্তহীনতায় থাকার পর রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) থেকে অনলাইন ক্লাস শুরুর সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে দরিদ্র ও গ্রামে থাকা শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের নাগাল পাবে কিনা— তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বর্তমানে গ্রামে অবস্থান করছে। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থীর আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। স্মার্টফোন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট নিয়ে তারা কিভাবে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেবে— এ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অনলাইনে ক্লাস শুরুর পর সমস্যা চোখে পড়লে, সেগুলো আন্তরিকতার সঙ্গেই দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইনে দেওয়া লেকচার পরে সুবিধামতো সময়ে ডাউনলোড করে নেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ কারণে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এ অবস্থায় সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আগামীকাল রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও (চবি) অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাসে কত শতাংশ শিক্ষার্থী যুক্ত হতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহে রয়েছে খোদ শিক্ষার্থীরাই।

শিক্ষার্থীদের মতে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে। অনলাইনে ক্লাস করতে হলে উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রয়োজন। কিন্তু গ্রামে ইন্টারনেটের গতি অত্যন্ত কম। এছাড়া ইন্টারনেট প্যাকেজের দামও অনেক। করোনাকালে সবার আর্থিক অবস্থা খারাপ।

শিক্ষার্থীদের দাবি, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যদি চবি কর্তৃপক্ষও বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট প্যাকেজ সরবরাহ করে, তবে অনলাইনে ক্নাস করা তাদের কিছুটা সহজ হবে।

মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার উড়িরচরে অবস্থান করা আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জাকের পারভেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যারা গ্রামে চলে এসেছি তাদের পক্ষে ইন্টারনেটে ক্লাস করা অনেকটা সম্ভব। কারণ গ্রামে ইন্টারনেটের গতি খুবই কম। আমাদের এখানে বিদ্যুৎ নেই। ফলে ঠিকমতো মোবাইল বা কম্পিউটার চার্জও করতে পারি না। তাছাড়া টেলিকম কোম্পানিগুলোর ডাটা প্যাকের যে দাম, সবার পক্ষে ডাটা প্যাক কেনাও সম্ভব না। কর্তৃপক্ষের উচিত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ইন্টারনেট ডাটা সরবারহ করা।’

মানিকগঞ্জের গুলাটিয়ায় অবস্থান করা আরবি বিভাগের নৌশিন সাদিয়া বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস করার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত না। প্রথমত আমরা যারা গ্রামে থাকি তাদের জন্য অনলাইন ক্লাস স্বপ্নের মত। এখানে রুমে ফোনে কথা বলার জন্যই নেটওয়ার্ক ভাল পাওয়া যায় না। সেখানে অনলাইনে ক্লাস তো হাস্যকর। তাছাড়া ১ জিবি নেট এর দামও ২৪-২৫ টাকা। তবুও নেটের স্পিড পাওয়ার জন্য খোলা মাঠের দিকে যেতে হয়।

পঞ্চগড় সদর উপজেলায় অবস্থান করা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাগিব শাকিল বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস করার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত নই। আমি চাই না কখনো অনলাইনে ক্লাস হোক। কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে ছাত্র-ছাত্রীরই বাড়ি গ্রামে। কারো কারো বাড়ি জেলা শহর থেকে অনেক দূরে। এতটাই দূরে যে, সেখান থেকে মোবাইলে কথা বার্তা বলতেও সমস্যা হয়, ইন্টারনেট ব্যবহার তো দূরের কথা।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য অনেক বেশি। একেকটা ক্লাস করতে এক জিবির মতো ডাটা লাগতে পারে, যা আমাদের মতো ছাত্রের পক্ষে কখনও পরিচালনা করা সম্ভব না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি ইন্টারনেট দেয় তবে আমরা ডাউনলোড করে পড়ে নিতে পারবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এসএম মনিরুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোববার থেকে জুম অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের অনলাইন ক্লাস শুরু হবে। আমরা জানি এই মুহূর্তে সবাইকে যুক্ত করতে পারবো না। যারা যুক্ত হতে পারবে তাদের নিয়ে আমরা শুরু করতে চাই। যারা যুক্ত হতে পারবে না তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা আছে। লেকচার দেওয়া থাকবে পরে তারা ডাউনলোড করে পড়ে নিতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা যুক্ত হতে পারবে না, তারা আমাদের সাথে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করবে। পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেটা আমরা চিন্তা করবো। ইউজিসির সাথে সরাসরি আলাপ করবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!