চট্টগ্রাম মেডিকেলে পোড়া রোগীদের অনুদানের টাকা খরচ হবে অন্য খাতে

৩ দিনে জমা পড়েছে ২৭ লাখ টাকা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর কন্টেইনার বিস্ফোরণের ঘটনায় পোড়া রোগীদের জন্য গত তিনদিনে প্রায় ২৭ লাখ টাকার অনুদান জমা পড়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালকের হাতে। ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে টাকা ছাড়াও চিকিৎসাসামগ্রী এবং ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তবে আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত টাকা ও ওষুধ রয়েছে। তাই অনুদানের এসব টাকা ও চিকিৎসাসামগ্রী অন্য রোগীদের জন্য ব্যয় করা হবে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

জানা যায়, বুধবার (৮ জুন) সন্ধ্যায় সাইফ পাওয়ারটেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। তাদের বাকি ২৫ লাখ টাকাও শিগগির দেওয়া হবে। এছাড়া আরও কয়েকজন ব্যক্তি উদ্যোগে ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুদান জমা দিয়েছে।

এছাড়া অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। রোববার (৫ জুন) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নিহতদের দাফন ও সৎকার এবং আহতদের চিকিৎসায় এই অর্থ দেওয়া হবে।

একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যেসব শ্রমিক নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ টাকা এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

তবে চিকিৎসার জন্য অনুদান আসলেও জীবন-জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে রোগীর স্বজনরা। এদেরই একজন অগ্নিদগ্ধ বাবুল আক্তারের মা মর্জিনা। বাবুল বিএম ডিপোর ডিজিএমের গাড়ি চালাতেন। বিস্ফোরণের আগুনে তার শরীরে ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।

বাবুলের মা মর্জিনা জানান, আমার ছেলের আয়ে সংসার চলত। এখন কী হবে জানি না। এখান থেকে গিয়ে ছেলের ওষুধ ও চিকিৎসা কীভাবে চালাবো তাও জানি না। ছাড়পত্র দেওয়ার সময় ডাক্তারের লিখে দেওয়া ওষুধগুলো যদি সঙ্গে দেওয়া হতো তাহলে বাড়ি গিয়ে আর ওষুধ কিনতে হতো না।

হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমা বলেন, ‘আগুনে পোড়া রোগীদের ছাড়পত্রের সময় ডাক্তারের লেখা ওষুধ দেওয়া হবে কিনা, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। আমরা চিন্তা করেছি সাইফ পাওয়ারটেকের ২৫ লাখ টাকা সমাজেসেবা অধিপ্তরের অধীনে রোগী কল্যাণ সমিতিতে দিয়ে দেব। এখান থেকে গরিব রোগীরা ওষুধ পাবে।’

তিনি বলেন, ‘তবে হাসপাতালে সরকার থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ আছে। তাই বাইরে অনেকেই চাঁদা তুলছে রোগীদের ঔষুধ কিনে দেওয়ার জন্য, এটি করতে আমরা নিষেধ করছি। কারণ সেসবের দরকার নেই।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ম ম মিনহাজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পরিচালক যেহেতু নিজেই টাকা গ্রহণ করে রেজিস্টারভুক্ত করছেন, তাই আশা করা যাচ্ছে টাকাগুলো ব্যয়ের খাত স্বচ্ছ হবে। রোগীদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।’

অনুদানের টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে−জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘টাকাগুলো আগুনেপোড়া রোগী নয়, হাসপাতালের কাজে খরচ করা হবে। কারণ সরকার থেকে আমাদের পর্যাপ্ত টাকা, ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও খাবার দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রোগীদের জন্য যা দরকার সব করা হবে। আপাতত আমাদের বাইরের কারো অনুদানের দরকার নেই।’

তিনি বলেন, ‘অনুদানের টাকা রেজিস্টারভুক্ত করে হিসেব রাখা হচ্ছে। উপপরিচালক এটি দেখভাল করছেন। টাকাগুলো হাসপাতালের কাজে ব্যয় করা হবে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে রোগী কল্যাণ সমিতিকে টাকাগুলো দেবো আমরা। আর ওষুধগুলো অন্য রোগীদের জন্য রাখা হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!