চট্টগ্রাম মেডিকেলে কর্মচারীর হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত— ‘থাপড়াইতে থাপড়াইতে নিয়া যাবো’

‘যাবি না? থাপড়াইতে থাপড়াইতে নিয়া যাব’– গণমাধ্যমকর্মীকে এভাবেই চট্টগ্রাম মেডিকেলের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ড থেকে বের করেন এক কর্মচারী।

লাঞ্ছনার শিকার হওয়া ওই গণমাধ্যমকর্মী হলেন চ্যানেল ২৪ এর চট্টগ্রাম অফিসের রিপোর্টার ইবেন মীর। তাকে লাঞ্ছিত করেন ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ মজনু মিয়া। এই ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন ওয়ার্ডের ডাক্তার ঋভুরাজ চক্রবর্তী। তিনি ক্যাজুয়ালটি বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত।

শনিবার (৫ আগস্ট) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের সামনে চলন্ত লরির নিচে চাপা পড়েও বেঁচে যাওয়া ৫ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে ইবেন মীর এমন দুর্ব্যবহারের শিকার হন।

ইবেন মীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া চট্টগ্রাম মেডিকেলের ক্যাজুয়ালিটিতে চিকিৎসাধীন ৫ জনের ইন্টারভিউ নিতে যাই। ওয়ার্ডে প্রবেশের আগে আমি হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানকে ফোন দেই। তার কাছ থেকে অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, ওয়ার্ডের ভেতরে গিয়ে কোনো ফুটেজ নেওয়া যাবে না। সম্ভব হলে বাইরে বেঁচে যাওয়াদের নিয়ে এসে সাক্ষাৎকার নিতে পারেন। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় ক্যামেরা-মাইক্রোফোন রেখে ওয়ার্ডে বেঁচে ফেরাদের বক্তব্য মোবাইল ফোনে রেকর্ড করতে থাকি।’

তিনি বলেন, ‘বক্তব্য রেকর্ডের সময় ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ঋভুরাজ চক্রবর্তী এসে আসার পরিচয় জানতে চান। ডাক্তার কথা শেষ না করতেই ব্রাদার মজনু মিয়া আমার আইডি কার্ড দেখতে চান। পরিচয় নিশ্চিত করার পরও দুর্ব্যবহার করতে থাকেন ডা. ঋভুরাজ চক্রবর্তী ও ব্রাদার মজনু মিয়া।’

সাংবাদিক ইবনে মীর বলেন, ‘এক পর্যায়ে মজনু মিয়া ডা. ঋভুরাজকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ওয়ার্ডের বাইরে নিয়ে আসেন। আমাকে ধাক্কাচ্ছেন কেন— জানতে চাইলে মজনু মিয়া বলেন, ধাক্কাবো মানে? যাবি না? থাপড়াইতে থাপড়াইতে নিয়া যাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরিচালকের কথামতো ওয়ার্ডে ক্যামেরা, মাইক্রোফোন নিয়ে যাইনি। আমি মোবাইলে কথা রেকর্ড করছিলাম। তখনই ডাক্তার ও ব্রাদার এসে আমাকে ধাক্কা দিতে দিতে বাইরে বের করে দেন। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।’

এই বিষয়ে জানতে ব্রাদার মজনু মিয়া বলেন, ‘আমি ওসব গালাগাল দেইনি। আর ধাক্কাও দেইনি রিপোর্টারকে। ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে তা মিথ্যা।’

তিনি এই প্রতিবেদককে ডা. ঋভুরাজ চক্রবর্তী ও হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে ‘দেখা করা’র পরামর্শ দেন।

এই বিষয়ে জানতে ডা. ঋভুরাজ চক্রবর্তীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শমীম আহসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনাটি আরো খতিয়ে দেখব। কাল অফিসে যাই। তারপর আমি কী করবো, সেটি বলতে পারবো।’

বাংলাদেশ নার্স অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম মেডিকেল শাখার সভাপতি আশু চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এভাবে রিপোর্টারের গায়ে হাত কেন দেবে ব্রাদার মজনু মিয়া? এসব কারণে সাধারণ মানুষ নার্সদের হেয় চোখে দেখে।’

মজনু মিয়ার কাছ থেকে বিষয়টি জেনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান আশু চৌধুরী।

হাসাপাতাল সূত্র জানায়, ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ মজনু মিয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের প্রচুর অভিযোগ। ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে এই মজনু মিয়া রীতিমতো ব্যবসা খুলে বসেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর স্বজন জানান, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মজনু মিয়ার মতো চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের হাতে ১০০% জিম্মি। এদের কাছে সব তুচ্ছ।’

আইএমই/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!