চট্টগ্রাম নগরীতে তিন পাহাড়ি সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ

চট্টগ্রামের রাউজানের একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান। তিনি রাউজানে হৃদয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।

চট্টগ্রাম নগরীতে তিন পাহাড়ি সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ 1

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)-এর উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

‘সকল গণতান্ত্রিক শক্তি জাগ্রত হও, পাহাড়িদের বিরুদ্ধে নর-মাংস খাওয়ার গুজব, হয়রানি, নির্যাতন ও অপদস্ত করা বন্ধ কর’— শ্লোগানে চট্টগ্রামের রাউজানে শিবলি সাদিক হৃদয়ের হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি প্রদান এবং এই হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করে পাহাড়িদের সম্পর্কে গুজব রটনাকারী ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সমাবেশটির আয়োজন করা হয়।

সমাবেশের আগে তীব্র ঝড় উপেক্ষা করে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ডিসি হিল থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে এক সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি শুভ চাক-এর সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল চট্টগ্রাম পূর্ব-৩ এর সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূলন ভৌমিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, গণ অধিকার চর্চা কেন্দ্রের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান খান, সুপ্রভাত বাংলাদেশ পত্রিকার রিপোর্টার নীলা চাকমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক আবির ইসলাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সুদেব চাকমা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য জেসি চাকমা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সাইফুর রুদ্র প্রমুখ।

সমাবেশে ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলো অংশগ্রহণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে যদি পাহাড়িরা অংশগ্রহণ না করতো তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আমরা দখল করতে পারতাম না। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরে এদেশের সংখ্যালঘুরা অবহেলিত। একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।

অ্যাডভোকেট ভূলন ভৌমিক বলেন, পাহাড়িরা এদেশের উৎপাদন থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এদেশের শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন নানা বিদ্বেষ ছড়িয়ে পাহাড়ি জাতিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সম্প্রতি রাউজানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটককৃত এক পাহাড়ি যুবককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কেউ যদি অপরাধ করে থাকে তার নিশ্চয় প্রচলিত আইন-আদালতের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি হবে। কিন্তু গ্রেফতার অবস্থায় পুলিশের হেফাজত থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে কেন হত্যা করা হলো প্রশাসনকে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা রাউজানে সিবলি সাদিক হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানাই। এ ঘটনায় জড়িতরা যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে আদালতের মাধ্যমে তাদের নিশ্চয় বিচার ও শাস্তি হবে।

সমাবেশে নীলা চাকমা বলেন, রাউজান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে যখন প্রশ্ন করেছিলাম হৃদয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে সেটা আপনারা রোধ করছেন না কেন? তখন তিনি বলেন এটি সাইবার ক্রাইমের বিষয়, তারাই সেটি করে থাকে। রাউজানের ওসি চাইলে বিষয়টি রোধ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা যখন সমতলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে আসে তখন সমতলবাসি বাঙালিদের কাছ থেকে নানা হেনস্তার শিকার হতে হয়। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে, বাজার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও একইভাবে হেনস্তার শিকার হন। সাম্প্রতিক হৃদয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষী বক্তব্য উত্থাপন করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে পাহাড়িদের দেখলে ‘মানুষখেকো, মানুষ খাওয়া পাহাড়িরা বাঙালিদের বন্ধু হতে পারে না’ ইত্যাদি বলে অপমান করা হচ্ছে। এসব ঘটনা খুবই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।

সমাবেশ থেকে বক্তারা হৃদয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দুষ্কৃতিকারীদের বিচার ও শাস্তি এবং পাহাড়িদের সম্পর্কে গুজব রটনাকারী ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। একই সাথে তারা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!