চট্টগ্রামে ১১২ বিলাসবহুল গাড়ির নিলামে আগ্রহ কম, নানা জটিলতায় বিক্রিও হয় না

পুরনো গাড়ির দাম রাখা হয়েছে নতুনের মূল্যে

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলামে তোলা ১১২ বিলাসবহুল গাড়ির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারিং পারমিট (সিপি) অবমুক্ত চান ব্যবসায়ীরা। কাস্টমসের আইন অনুসারে কোনো গাড়ি উৎপাদনের ৫ বছরের বেশি হলে নিলাম অথবা বিক্রি করার ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারিং পারমিট নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) নিলামে উঠতে যাওয়া ১১২টি বিলাসবহুল গাড়িই ১০ বছর ধরে পড়ে আছে বন্দরে। এই গাড়িগুলোর উৎপাদন হয়েছে আরও কয়েক বছর আগে। ফলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এসব গাড়ি ক্লিয়ারিং পারমিট (সিপি) পাওয়ার কথা নয়।

অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরাতন এসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে গেলেও পড়বে হবে নতুন ঝামেলায়। এসব গাড়ির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনও সহজ করার দাবি করছেন তারা।

আবার নিলামের ক্ষেত্রে সংযোজিত পণ্যের মূল্যের ৬০ শতাংশ কাভারেজ করার নিয়ম রয়েছে। বিলাসবহুল এসব গাড়ির ৬০ শতাংশ মূল্য কাভারেজ করতে গেলে ভ্যাটসহ ৪ কোটি টাকার গাড়িতে ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা মূল্য দিতে হবে। সেক্ষেত্রে কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই পুরাতন গাড়ি এক কোটি টাকার মধ্যেই বাংলাদেশে পাওয়া যায়। ফলে ৬০ শতাংশ মুল্য সংযোজনের বিষয়টিও অবমুক্ত চান ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের গাড়ি আমদানিকারক রমনা কারের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ সাদেক বলেন, নিলামে তোলা গাড়িগুলোর মান এতই খারাপ যে সেগুলো কিনে আমরা আর বিক্রি করতে পারবো না। ২০ বছর আগে উৎপাদন হওয়া গাড়িগুলো বিক্রি করা হচ্ছে এখন। ফলে সেগুলোর মডেলও অনেক ‘ব্যাকডেটেট’ হয়ে গেছে। এ ধরনের মডেলের প্রতি আমাদের দেশের ক্রেতাদের আগ্রহ নেই।

চট্টগ্রামের আরেক গাড়ি আমদানিকারক মোহাম্মদ শামীম বক্স বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা গাড়িগুলোর নিলাম মূল্য সেই সময়ের নতুন গাড়ির দামেই রাখা হয়েছে। এ দামে নতুন ব্যান্ডের নতুন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম।

চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিলামকারী বিডার ইকবাল হোসেন বলেন, বিলাসবহুল গাড়ি হলেও গাড়িগুলো বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় রোদের গরমে গাড়ির ভিতরের অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সহজে ক্লিয়ারিং পারমিট (সিপি) পাওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গাড়িগুলো পুরাতন হয়েছে। সেটি বিডাররা দরপত্র দেওয়ার পর আমরা বিবেচনা করতে পারবো। সন্তোষজনক মূল্য পেলে আমরা দিয়ে দেবো। এ ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ পুরণ হতে হবে— এমন কথা নেই। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস চায় গাড়িগুলো বিক্রি হয়ে যাক। বন্দরের গাড়ি রাখার জায়গা খালি হোক।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার আলী রেজা হায়দার বলেন, ‘যেসব গাড়ি বিগত সময়ে কয়েকবার নিলামে তোলা হয়েছিল সেসব গাড়ির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনের বিষয়টি ছাড় দেওয়া হবে। তবে নতুন যেসব গাড়ি নিলামে উঠবে সেসবে মূল্য সংযোজন ছাড় দেওয়া হবে না। সিপির বিষয়েও লটে স্পষ্টভাবে বলা আছে। পরবর্তীতে কোন বিডার চাইলে সিপি না পাওয়ার জন্য পে-অর্ডার ফেরত চাইতে পারবেন না। সেটি তখন রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে। এ নিলামে ২০টি গাড়ির ক্লিয়ারিং পারমিট (সিপি) নেওয়াই আছে।’

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) ল্যান্ডরোভার-মার্সিডিজ বেঞ্জ-বিএমডব্লিউসহ ১১২টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে বিক্রি করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কারনেট সুবিধায় আসা এসব গাড়ি ইলেকট্রনিক নিলামের (ই-অকশন) মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।

গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে— মিৎসুবিসি ২৬টি, মার্সিডিজ বেঞ্চ ২৫টি, বিএমডব্লিউ ২৫টি, ল্যান্ডরোভার ৭টি, ল্যান্ডক্রুজার ৭টি, একটি সিআরভি, লেক্সস ৬টি, ফোর্ড ৫টি, জাগুয়ার ৩টি, একটি দাইয়ু ও একটি হোন্ডাসহ নামিদামি ব্রান্ডের গাড়িসহ মোট ১১২ টি গাড়ি রয়েছে।

দামি গাড়ির মধ্যে রয়েছে— ৪ কোটি টাকার ল্যান্ড রোভার (চেসিস নম্বর SALLMAMA33A138536), ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার মিৎসুবিসি জিপ (JMALYV75W2J000312), ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার মার্সিডিজ বেঞ্জ জিপ (WDC1631542X706971), ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ল্যান্ড রোভার জিপ (SALLSAA136A974340), ২ কোটি ১২ লাখ টাকার লেক্সাস জিপ (JTJHK31U802028078), ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার মিৎসুবিসি পাজেরো (JMALYV75WIJ000333), ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার মার্সিডিজ (WDC1631572A532849), ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকার রেঞ্জ রোভার (SALLMAM536A211299), ৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার রেঞ্জ রোভার (SALLMAM337A247986), ১ কোটি ৯২ লাখ টাকার বিএমউব্লিউ (WBAFA52040LM56547), ২ কোটি ২৯ লাখ টাকার টয়োটা (BT07FZE), ৪ কোটি ৫ লাখ টাকার ল্যান্ড রোভার (SALLSAA536A937332), ১ কোটি ৬২ লাখ টাকার বিএমউব্লিউ এক্স ফাইভ (A8MUJ), ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার বিএমউব্লিউ এক্স ফাইভ জিপ, ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার ল্যান্ড ক্রুজার জিপ (JT111WJA005002926), ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার ল্যান্ড ক্রুজার (JTFHC05J104026476), ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার ল্যান্ড রোভার (SALLSAA335A909690), ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বিএমউব্লিউ (FV51ARF), ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার মিৎসুবিসি শোগান (JMAORK9603J000331), ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার রেঞ্জ রোভার (SALLMAM336A220098), ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিএমউব্লিউ এক্স ফাইভ জিপ স্পোর্টস (WBAFB52040LT83001), ৪ কোটি ৫ লাখ টাকার ল্যান্ড রোভার, ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকার লেক্সাস জিএস ৪৫০ এইচ (JTHB0968405005295), ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিএমউব্লিউ জিপ, ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকার মিৎসুবিসি শোগান (JMALYV75W4J000138), ২ কোটি ৮ লাখ টাকার মার্সিডিজ (WDC1631572A507253)সহ আরও নানা গাড়ি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!