চট্টগ্রামে ব্যাংকের ১০ কোটি টাকা মিলেমিশে লুটপাটে চার ব্যবসায়ীসহ সাত ব্যাংকার

তদন্ত শেষে মামলায় গেল দুদক

তারা ৪ জন ব্যবসায়ী এবং বাকি ৭ জন ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মিলেমিশে লাভবান হওয়ার আশায় ব্যাংকে বন্ধক রাখা সম্পত্তির সরকারি মৌজা ও বাজারমূল্য কম থাকার পরও আগের ঋণের বিপরীতে আরও অতিরিক্ত ১০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেন তারা। অতিরিক্ত নেওয়া এই ঋণের মেয়াদ ছিল মাত্র ৩ মাস। মেয়াদ পার হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় ধরে সেই ঋণ পরিশোধ করা হয়নি। কারণ পুরো টাকাই অভিযুক্ত এই ১১ জন মিলে মেরে দিয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে এমন জালিয়াতি ধরা পড়ার পর দীর্ঘ তদন্ত শেষে সোমবার (২৯ আগস্ট) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক বাদি হয়ে অভিযুক্ত ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দুদকের উপপরিচালক মো. নাজমুছ সাদাত।

অভিযুক্ত চার ব্যবসায়ী হলেন— চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার এসবি অটো ব্রিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পেচু মিয়ার পুত্র মো. ছগীর চৌধুরী, বাকলিয়ার মেসার্স আলম এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মো. আবু আলম ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তার এবং ন্যাশনাল সার্ভে বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম।

অন্যদিকে অভিযুক্ত সাত ব্যাংক কর্মকর্তা হলেন— ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানার দত্তেরচর দক্ষিণের মো. মেজবাউল হক চিশতীর পুত্র মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), সাবেক ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড ও বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের খাতুনগঞ্জ শাখার সাবেক এসভিপি শওকত ওসমান চৌধুরী, সাবেক ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড ও বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের খাতুনগঞ্জ শাখার সাবেক এস ই ও এন্ড ম্যানেজার অপারেশন মো. আনোয়ার হোসেন, ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ফয়সাল আহসান চৌধুরী, ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের কর্মরত একেএম শামীম, ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিইও চৌধুরী মোস্তাক আহমেদ এবং ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত ড. আতহার উদ্দিন।

দুদক জানায়, পারস্পরিক যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ গ্রহীতার বন্ধকী সম্পত্তির ফোর্সড সেল ভেল্যু কম জানার পরও আগে নেওয়া ১৪ কোটি টাকা ঋণের অতিরিক্ত আরও ১০ কোটি টাকা ৩ মাস মেয়াদি ঋণ হিসেবে প্রদান করে পদ্মা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা। পরবর্তীতে সময় শেষ হলেও ওই ঋণ পরিশোধ না করে এসব অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তর করে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা তৎসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় এজাহারের উল্লেখিত চার নম্বর আসামি মো. ছগীর চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের আপন ভাগ্নে।

এর আগে এই মামলার ১ নম্বর আসামি মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীর বিরুদ্ধে ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ২৫৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ঢাকার আদালতে একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এছাড়া প্রায় ১৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল গুলশান থানায় মো. মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, স্ত্রী রোজী চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতীসহ সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হয়।

এমএ/এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!