কেজিকয়েক কাপড় ধুতেই ২ কোটি টাকার ওয়াশিং প্ল্যান্ট!

লোক ঠিক না করেই উদ্বোধন তড়িঘড়ি

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দুই কোটি টাকা খরচ করে ওয়াশিং প্ল্যান্ট উদ্বোধন করা হলেও ১১০ কেজির জায়গায় হাসপাতালে ব্যবহৃত কাপড় কাচা হচ্ছে মোটে কয়েক কেজি। লোকবল ঠিক না করেই উদ্বোধনে অতি উৎসাহী হওয়ার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ওয়াশিং প্ল্যান্টটি সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ওয়াশিং প্ল্যান্টটি সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ওয়াশিং প্ল্যান্টটি চালাতে আরও দুজন স্টাফ দরকার। কিন্তু সেই লোকবল কবে নিয়োগ হবে সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এতো দামি মেশিন সচল না রাখলে পরবর্তীতে তা চালাতে গেলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই ওয়াশিং প্ল্যান্টে ১০০ কেজি কাপড় কাচা সম্ভব হবে। কিন্তু লোকবল না থাকায় অপারেটিং করা যাচ্ছে না। আপাতত প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে কয়েক কেজি কাপড় ধোয়া যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এই মেশিন অপারেট করতে প্রশিক্ষিত দুজন স্টাফ দরকার। আশা করছি সামনের মাস থেকে পুরোদমে চালু করতে পারব।’

তবে লোকবল নিয়োগ অনিশ্চিত বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক স্থাপিত ওয়াশিং প্ল্যান্টে কাপড় ধোয়ার পর তা সঙ্গে সঙ্গে ইস্ত্রি হয়ে যাবে। আলাদা করে কাপড় শুকানোর প্রয়োজন হবে না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এতোদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ওয়ার্ডের কাপড়চোপড় বেসরকারি কোন ড্রাইওয়াশের দোকানে দেওয়া হতো। এতে সময় ও খরচ বেশি পড়ে যেত। এতে প্রতিবছর বড় অংকের একটা টাকা চলে যেত হাসপাতালের তহবিল থেকে। এখন হাসপাতালে ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের ফলে সহজে এ কাজ করা যাবে। এতে সরকারি রাজস্বও সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, করোনার সময় থেকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের কাপড় ও ওয়ার্ডের সব বস্ত্রসামগ্রী প্রতিদিন পরিস্কার করার প্রয়োজন পড়ছে। আগে যে ধোয়া সপ্তাহে একদিন করা হত, সেটি এখন সপ্তাহের প্রতিদিন করায় ধোপা খরচ মেটাতেই বড় অংক চলে যাচ্ছে হাসপাতাল থেকে।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে করোনা রোগীদের ব্যবহৃত বস্ত্র, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পোশাক পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে নিজস্ব ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য একই বছরের ১৩ জানুয়ারি অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়।

এরপর ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফও) সহায়তায় ১ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াশিং মেশিন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ড্রায়ার মেশিন ও আয়রন মেশিন দরপত্রের মাধ্যমে কেনা হয়। চীনে তৈরি এসব মেশিন সরবরাহ করে ঢাকার ব্লু ক্যানভাস লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মেশিন ও প্ল্যান্ট স্থাপনে খরচ হয় ২২ লাখ ৭২ হাজার টাকা।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, রোগী ও হাসপাতালে ব্যবহৃত কাপড় ঠিকাদারদের দিয়ে জীবাণুমুক্ত করাতে অনেক টাকার দরকার হয়। সময়ও বেশি লাগে। এখন নিজস্ব প্ল্যান্টে দ্রুত সময়ে কাপড় জীবাণুমুক্ত করা যাবে বলে আশা রাখছি। কিন্তু লোকবল না থাকায় বিপাকে আছি এত বড় মেশিন নিয়ে।

হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দিয়ে এ প্ল্যান্ট সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!