চট্টগ্রামে নারীরা হঠাৎ করোনার ‘হাই রিস্কে’, হাসপাতালে নারী রোগী বেড়েছে অস্বাভাবিক
এক জেনারেল হাসপাতালেই ১৮১ রোগীর ১১০ জনই নারী
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে শুক্রবার (১৩ আগস্ট) রাত পর্যন্ত শেষ ১২ ঘন্টায় মারা গেছেন ৫ জন— যার ৪ জনই নারী। করোনা আক্রান্ত এই নারীদের সকলেই আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এই খবর করে হাসপাতাল সূত্র জানাচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াই নয় শুধু, হঠাৎ করেই চট্টগ্রামের প্রধান এই করোনা চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে করোনা আক্রান্ত নারীদের ভর্তির সংখ্যা বেড়ে গেছে অভাবনীয় হারে। দিনের ভর্তি থেকে নরমাল ওয়ার্ড ও আইসিইউ সবখানেই নারী রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। এদের মধ্যে আবার বেশিরভাগই উপজেলা থেকে আসা রোগী। হঠাৎ করে নারী রোগী ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াটা ভাবনায় ফেলে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানজিমুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে এই হাসপাতালে ভর্তি থাকা ১৮১ জনের মধ্যে ১১০ জনই নারী। যা হাসপাতালের মোট রোগীর ৬১ শতাংশ।’
‘এছাড়া হাসপাতালটির আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ১৭ জনের ১৩ জনই নারী। এর মধ্যে ২৮ বছর বয়সী এক নারীর অবস্থা বেশ আশংকাজনক— যিনি গত ১৪ দিন ধরে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন’— জানান ডা. তানজিম।
এদিকে শুক্রবার (১৩ আগস্ট) রাত পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৭ জন কোভিড পজিটিভ। সেখানেও ১১ জনই নারী— যা মোট ভর্তির ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে দুজন রয়েছেন করোনা আক্রান্ত গর্ভবতী নারী। এই দুজনসহ জেনারেল হাসপাতালে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মোট ৯ জন গর্ভবতী নারী।
হঠাৎ করে নারীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও হাসপাতালে ভর্তির পরিমাণ এভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি উদ্বেগজনক মন্তব্য করে ডা. আহমেদ তানজিমুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১২ ঘন্টায় যারা মারা গেছেন সকলেই ৪৫ বছরের ওপরে বয়স্ক নারী। শুধু একজন ছিলেন পুরুষ। হঠাৎ করে নারীদের এভাবে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুব উদ্বেগজনক।’
শুধু সরকারি জেনারেল হাসপাতাল নয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও একই রকম চিত্রের কথা জানা গেছে যোগাযোগ করে। বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার তালুকদার জিয়াউর রহমান শরীফ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এই মুহূর্তে নরমাল ওয়ার্ডে মোট ৭০ জন রোগী আছে, এর মধ্যে ২৯ জনই নারী। আইসিইউতে মোট ২৪ জনের ১৬ জনই নারী। মোট ৯৪ জন রোগীর মধ্যে ৪৫ জন নারী রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যার মধ্যে ৪ জন গর্ভবতী।’
নারীদের হঠাৎ করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেনারেল হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুর রব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নারী রোগী বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে নারীরা ভ্যাকসিন অনেক কম নিয়েছে। এটা একটা বড় কারণ। আবার গ্রামেগঞ্জে নারীরা আক্রান্ত হলেও ডাক্তারের কাছে দেরিতে যাচ্ছে। এজন্য দেরিতে শনাক্ত হচ্ছে। আর হাসপাতালে খারাপ অবস্থায় নারী রোগী ভর্তি হচ্ছে বেশি।’
এছাড়াও করোনার শুরুর দিকে নারীরা ঘর থেকে কম বের হলেও পরবর্তীতে সেটা অনেকটাই বেড়ে যাওয়াও এর একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।
সিপি