চট্টগ্রামের ‘মাদকের আখড়া’ এখন ফুলের স্বর্গ

চট্টগ্রামে এক মাদকের আখড়াকে ফুলের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে জেলা প্রশাসন। একটা সময় যে জায়গায় মাদকের গন্ধ ভেসে বেড়াতো, সেই জায়গা সৌরভ ছড়াচ্ছে দেশি-বিদেশি ১২৭ প্রজাতির ফুল। ফুল ছাড়াও রয়েছে দীঘিতে নৌকা বা কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা। শিশুদের জন্য আলাদা ‘কিডস জোন’ রাখতেও ভুলেননি আয়োজকরা। এই চিত্র চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠা ডিসি ফ্লাওয়ার পার্কের, যদিও এটি বর্তমানে ‘ডিসি পার্ক’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে।

চট্টগ্রামের ‘মাদকের আখড়া’ এখন ফুলের স্বর্গ 1

সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাট এলাকায় বন্দর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখেই অবস্থান এই পার্কটির। একদম সহজ করে বলতে গেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে ডিসি পার্কের অবস্থান।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ফুল উৎসব। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।

এই এলাকাটিয় ১৯৪ একর জায়গা অবৈধভাবে দখল নিয়ে শুকতারা রেস্তোরাঁর নাম দিয়ে দীর্ঘদিন ব্যবসা চালিয়ে আসছিল একটি সিন্ডিকেট। যদিও রেস্তোরাঁ ব্যবসার আড়ালে মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনার অভিযোগ ছিল দখলদারদের বিরুদ্ধে।

২০২৩ সালে অবৈধ স্থাপনাটি উচ্ছেদ করে সম্পূর্ণ জায়গাটি পুনরুদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। আর উদ্ধারের এক বছরের মধ্যেই মাদকের এই আখড়াতে ফোটানো হয়েছে ফুল।

চন্দ্রমল্লিকা, টিউলিপ, মনোহর ডালিয়া, গোলাপসহ ১২৭ প্রজাতির ফুলের সৌন্দর্য ও সুগন্ধে মাতোয়ারা চট্টগ্রামের ভ্রমন পিপাসু মানুষজন। মাত্র ৩০ টাকা প্রবেশ ফি’র বিনিময়ে এই ফুলের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। যদিও ফুল উৎসব হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জণসাধারণ বিনামূল্যে প্রবেশ করেছেন এই পার্কে। উৎসব চলবে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসবে রয়েছে নৌকা প্রদর্শনী, ভায়োলিন-শো, ঘুড়ি উৎসব, পিঠা উৎসব, পুতুল নাচ, নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা ও আর্ট প্রদর্শনী। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শুরু হবে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

৩০ টাকায় শুধু ফুল না, বাংলার ঐতিহ্য ১৫টি নৌকা দিয়ে বানানো হয়েছে একটি জাদুঘরও। যা পর্যটকদের ছবি তোলার খোরাক হবে। এছাড়াও ফুল উৎসব উপলক্ষে দেশের ১০০ গুণী শিল্পীর চিত্রও শোভা পাচ্ছে পার্কটিতে। পরিবার ও পছন্দের মানুষ নিয়ে যারা বেড়াতে আসবেন, তাদের জন্য রয়েছে পার্কের বিশাল দীঘিতে নৌকা ও প্যাডেলচালিত কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা। এই নৌকাগুলোতে ৫০ টাকার বিনিময়ে ১৫ মিনিট ঘুরতে পারবেন দীঘিতে। এছাড়া ভাসমান কাঠের সেতুটিও নজর কাড়তে ভুলেনি পর্যটকদের। বাচ্চা নিয়ে আসা দম্পতিদের ঝামেলা কমাতে একটা বিশাল অংশ জুড়ে বানানো হয়েছে কিডস জোন, যেখানে বাচ্চাদের নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে খেলাধুলার ব্যবস্থা।

পশু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে দেশি-বিদেশি কবুতরের শেড ও সানসেট ভিউ পয়েন্ট।

পার্কটিতে এসে মুগ্ধ হয়েছেন মন্ত্রী পরিষদের সচিব মাহবুব হোসেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এই ১৯৪ একর এলাকাটি ছিল পুরোপুরি মাদকের আখড়া। আমি খুবই অনুপ্রাণিত বোধ করছি যে, মাদকের আখড়া আজ ফুলের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ জায়গাটি আজ চট্টগ্রামবাসীর অহংকারের জায়গা হিসেবে তৈরি হচ্ছে। এটা এ শহরের ফুসফুস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ পার্ক পর্যটন ক্ষেত্রে সারাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ফুল উৎসবে এসে আমি অনেক বিমোহিত। সারা বাংলাদেশের জন্য একটি উদাহারণ তৈরি করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার। এ উদ্যোগের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে একটি নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করা হবে।

যেভাবে যাবেন পার্কে

চট্টগ্রাম নগরী থেকে কয়েকটি পথ ধরে যাওয়া যাবে এই পার্কে। প্রথমত হালিশহর-বন্দর সংযোগ সড়ক দিয়ে যাওয়া যাবে। সেজন্য কাস্টমস এলাকার বন্দর সংযোগ সড়কের টোলপ্লাজা দিয়ে সোজা ফৌজদারহাট আসলেই দেখা মিলবে পার্কটির।

এছাড়াও বায়েজিদ লিংক রোড ব্যবহার করেও যাওয়া যাবে সেখানে। বায়েজিদ থেকে শুরু হওয়া লিযক রোডটি শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এসে। রাস্তা পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিছন দিকেই রয়েছে পার্কটির অবস্থান।

অন্যদিকে সিটি গেট দিয়ে যে কোনো লোকাল গাড়িতে করে ফৌজদারহাট মোড়ে নেমে একটু বামে গেলেই পৌঁছানো যাবে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!