গুজব ছড়ানো রুখতে কড়া বার্তা চট্টগ্রাম পুলিশের

পরিকল্পিতভাবে দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। উন্নয়নের অগ্রগতি রুখতে স্বার্থান্বেষী মহল তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের সব আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর এই সহজ পথটি, অর্থাৎ ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর পথ বেছে নিয়েছে।

ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে প্রচারণা প্রসঙ্গে জানাতে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) নগরের দুই নম্বর গেইট এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) একেএম এমরান ভূঁঞা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দৌলা রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আফরুজুল হক টুটুল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সুপার বলেন, ছেলেধরা বা পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে—এমন গুজবের ঘটনা সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে শেয়ার করে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো পর্যবেক্ষণে রাখছি।

তিনি জানান, যারা গণপিটুনিতে অংশ নেবে এবং যারা ভিডিও করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ছেলে ধরা গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনির ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলায় ঘটে যাওয়া পাঁচটি ঘটনার মধ্যে তিনটিতেই মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা এসব গুজব ছড়িয়েছে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশব্যাপী ‘ছেলেধরা’ গুজবের মধ্যে এবার ‘বিদ্যুৎ থাকবে না’ বলে একটি মহল অসৎ উদ্দেশ্যে রটনা ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আগামী কয়েকদিন বিদ্যুৎ থাকবে না এবং অন্ধকারে ছেলেদের মাথা কাটা হবে—এমন গুজব একটি মহল অসৎ উদ্দেশ্যে রটাচ্ছে। তিনি বলেন, এটা পুরোপুরি গুজব এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

সম্প্রতি পদ্মা সেতু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের গুজবের জেরে গণপিটুনিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অনেকে। যারা আহত বা নিহত হয়েছেন— তাদের কেউই এরকম কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আহত ও নিহত সকলেই নিরীহ মানুষ।

কোন পোস্ট দিয়ে গুজবের শুরু হয়েছে, তা পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। গুজব ছাড়ানোর অভিযোগে সারাদেশে ৬০টি ফেসবুক আইডি, ২৫টি ইউটিউব লিংক এবং ১০টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা বন্ধে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ও থানার ফেইসবুক পেইজ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ইত্যাদি সামাজিক ও গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তি, মসজিদের ইমাম ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে প্রচার করা হচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে মিথ্যা গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

স্কুল কলেজের আশেপাশে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। স্কুল কলেজে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-অভিভাবকদের সাথে কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি যারা এসব গুজব ছড়াচ্ছে তাদেরকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

শুক্রবারের খুতবায় মসজিদের ইমামদেরও এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!