ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চট্টগ্রামে স্বীকারোক্তি আদায়, অভিযোগ নুরের

চট্টগ্রাম নগরীর জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের নেতাদের পুলিশ নির্যাতন করার পাশাপাশি ক্রসফায়ারেরও হুমকি দিয়েছে পুলিশ।

রাজধানীতে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেছেন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

নুরুল হক নুর অভিযোগ করেছেন, চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা স্বীকার না করলে চোখে কালো কাপড় বেঁধে ক্রসফায়ারেরও হুমকি দেয় পুলিশ। এ ছাড়া প্রত্যেকের পরিবারের কাছে পুলিশ এক লাখ টাকা চেয়েছে। টাকা না দিতে পারায় মামলায় জড়িয়ে জোরপূর্বক একজনের কাছ থেকে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে স্পষ্ট ভাষায় বলে আসছি, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, একটা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা হোক। পুলিশ বলেছে, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের (ছাত্র ও যুব অধিকারের নেতা) গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু সেই ফুটেজ পুলিশ গণমাধ্যমের কাছে উপস্থাপন করুক। তারা কিন্তু সেটি করছে না। বরং তারা হুমকি দিচ্ছে, আমরা যেন এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করি।’

জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলার মামলায় ছাত্র–যুব অধিকার পরিষদের ৯ নেতা–কর্মীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলার মামলায় ছাত্র–যুব অধিকার পরিষদের ৯ নেতা–কর্মীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

চট্টগ্রামের জে এম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় রোববার চট্টগ্রামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম কমিটির সাবেক আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ মিজান । সেখানে তিনি ১৫ অক্টোবরের ওই হামলার দুদিন আগে এ বিষয়ে পরিকল্পনা করার কথা বলেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলার মামলায় ছাত্র–যুব অধিকার পরিষদের ৯ নেতা–কর্মীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশের তদন্তে জনগণের আস্থা নেই বলে মন্তব্য করে নুরুল হক নুর সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের মুহাম্মদ রাশেদ খান, শাকিলুজ্জামান, ঝুনু রঞ্জন দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে জুমার নামাজের একটি মিছিল থেকে ঐতিহাসিক জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে গেটে হামলা হয়। হিন্দু সম্প্রদায় ওই পূজামণ্ডপের গেট ভাঙচুর করা হয়েছে বলে দাবি করলেও মাঠপর্যায়ে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজে মূলত গেটের ব্যানার ও কাপড় ছেঁড়ার চিত্রই ধরা পড়েছে।

এই ঘটনায় মোট ৮৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকশজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফিউদ্দীনের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে যুব অধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম নগর কমিটির সদস্য হাবিবুল্লাহ মিজান জানান, দুর্গাপূজার অষ্টমী (১৩ অক্টোবর) রাতে হামলার বিষয়ে পরিকল্পনা করা হয় শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতা মোক্তারের বাসায়। আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী দশমীর দিন (১৫ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর শুরু হয় তাণ্ডব।

মিজানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, চট্টগ্রামের মণ্ডপে হামলার সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর যুব অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ঘটনার দুইদিন আগে ১৩ অক্টোবর শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক নেতার বাসায় তারা হামলার পরিকল্পনা করে। দুদিন পর দশমীর দিন তারা আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর মিছিল সহকারে জেএমসেন হল পূজা মন্ডপে হামলা চালায়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!