কাশ্মীরে নিহত অনিন্দ্যের শিশুটি পৃথিবীর মুখ দেখেছে, বাবার মুখটি আর দেখবে না

বাবা যখন সুদূর কাশ্মীরের হাউসবোটে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিলেন, শিশুটি তখন মায়ের গর্ভে ৯ মাস ছুঁই ছুঁই। বাবার মৃত্যুর ৪০ দিন পর ফুটফুটে সেই শিশু পৃথিবীর মুখ দেখলো ঠিকই, কিন্তু জন্মদাতা বাবার মুখটি আর দেখার সুযোগ হল না তার। আজীবন তাকে এই আক্ষেপ নিয়েই থাকতে হবে।

গত ১১ নভেম্বর স্থানীয় সময় ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে ভারতের কাশ্মীরের শ্রীনগরের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র ডাল লেকের ৯ নম্বর ঘাটের কাছে কয়েকটি হাউজবোটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চট্টগ্রামের বাসিন্দা তিন পর্যটক নিহত হন।
গত ১১ নভেম্বর স্থানীয় সময় ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে ভারতের কাশ্মীরের শ্রীনগরের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র ডাল লেকের ৯ নম্বর ঘাটের কাছে কয়েকটি হাউজবোটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চট্টগ্রামের বাসিন্দা তিন পর্যটক নিহত হন।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা ৩টায় চট্টগ্রাম নগরীর ইমপেরিয়াল হাসপাতালে মা প্রিয়াংকা দেবীর গর্ভে জন্ম হয় অনিন্দ্য কৌশলের তৃতীয় এই সন্তানের। ওদিকে গত ১৫ নভেম্বর ভারতের কাশ্মীর থেকে আনার পর থেকে গত একমাস ধরে প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশলের লাশ পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে। এখনও তার লাশটি ডিএনএ পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে। এর ফলাফল পাওয়ার পরই সেটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

গত ১১ নভেম্বর স্থানীয় সময় ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে ভারতের কাশ্মীরের শ্রীনগরের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র ডাল লেকের ৯ নম্বর ঘাটের কাছে কয়েকটি হাউজবোটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চট্টগ্রামের বাসিন্দা তিন পর্যটক নিহত হন। এ ঘটনায় প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল ছাড়াও নিহত হন ইমন দাশগুপ্ত ও মাইনুদ্দিন চৌধুরী। তারা তিনজনই ৩ নভেম্বর চিকিৎসা ও বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ভারত যান।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের পুরকৌশল বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অনিন্দ্য কৌশল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠাছড়ার দুর্গাপুরে।

তিন সন্তানের জনক ৩৬ বছর বয়সী অনিন্দ্য কৌশলের বড় মেয়ে স্পৃহার বয়স ৪ বছর, ছোট ছেলে স্পর্শের বয়স মাত্র ২ বছর।

অনিন্দ্য কৌশলের ভগ্নিপতি চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আশীষ কুমার নাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভারত থেকে আনার পর থেকে অনিন্দ্য কৌশল ছাড়াও বাকি দুজনের মরদেহ পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। সেখানে মরদেহের ডিএনএ টেস্ট করানোর কথা রয়েছে। প্রায় একমাস ধরে আমরা সেই টেস্টের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করছি, আগামী রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রিপোর্ট পেতে পারি। এরপর মরদেহ চট্টগ্রামে নিয়ে আসতে পারবো।’

কাশ্মীরের অগ্নিকাণ্ডে নিহত বাকি দুজনের মধ্যে ইমন দাশগুপ্ত (৩৪) ছিলেন খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানের বিনাজুরিতে। তিনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের পুরকৌশল বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ৫ বছর বয়সী একটি ছেলে তার। এ ঘটনায় নিহত অন্যজন— রাউজানের কদলপুরের বাসিন্দা ঠিকাদার মো. মাইনুদ্দিন (৪০)। তার বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে এবং ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

জানা গেছে, অনিন্দ্য কৌশলের পাশাপাশি ইমন দাশগুপ্ত ও মো. মাইনুদ্দিনের লাশও ডিএনএ টেস্টের অপেক্ষায় গত এক মাস ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে পড়ে আছে। আগামী রোববার সেই রিপোর্ট পাওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, কাশ্মীরের হাউজবোটের আগুনে নিহতদের শরীর এতটাই ঝলসে গিয়েছিল যে, তাদের মরদেহের অবশিষ্টাংশের ডিএনও টেস্ট করানো ছাড়া পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!