কাশিমপুরের সেলে অস্থির প্রদীপ, স্ত্রী-পুত্র ভারতে— জানালেন এই প্রথম

নিকটাত্মীয়দেরও কেউ দেখতে যাচ্ছেন না

চট্টগ্রাম কারাগার থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে যাওয়ার পর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা খুনের মামলায় ফাঁসির আদেশ পাওয়া বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে তার কোনো আত্মীয়স্বজন দেখা করতে যাননি। আবার কারাগার থেকে ফোনেও কারও সঙ্গে কথা বলেননি এই কদিনে। কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে জিজ্ঞেস করলেও ‘ওসি’ প্রদীপ বলেছেন, তার স্ত্রী ও সন্তান বর্তমানে ভারতে আছে। নিকটাত্মীয়রাও যোগাযোগ রাখছেন না। এ কারণে আপাতত কারও সঙ্গে কথা বলার অবস্থা তার নেই।

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের হাই-সিকিউরিটি সেলে দায়িত্ব পালন করা এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁসির আসামির নির্ধারিত ড্রেস পরে কাশিমপুরের হাই-সিকিউরিটি পার্ট-৪ এর একটি কনডেম সেলে দিনযাপন করছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রদীপ কুমার দাশ। সিসিটিভি ক্যামেরাসহ কারাগারের অভ্যন্তরে দায়িত্ব পালন করা দুই গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নজরদারিতে রয়েছেন তিনি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তার খোঁজ নিচ্ছেন। সাধারণত কারও সঙ্গে কথা বলছেন না সাবেক এই ওসি। কারা কর্তৃপক্ষের লোকজন গেলে তাদেরকেও এড়িয়ে চলছেন।

হাই-সিকিউরিটি সেলে দায়িত্ব পালন করা ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ফাঁসির আসামিদের আমরা দেখভাল করি। ওসি প্রদীপের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আলাদা কোনো দিকনির্দেশনা নেই। তিনি অন্যান্য সাধারণ ফাঁসির আসামির মতোই আছেন। তার নামে কোনো ধরনের ডিভিশনও নেই। হাই-সিকিউরিটি ইউনিটে ৮৮৭ জন ফাঁসির আসামি রয়েছে। অন্যরা যেমন আছে তিনিও তাই থাকবেন। কাশিমপুর কারাগারে ১ হাজার ১৪টা সেল আছে। কাশিমপুর জেল হাই-সিকিউরিটি ইউনিট একমাত্র সেল সিস্টেম। বাংলাদেশের বাকি ৪৬৭টি কারাগারে ওয়ার্ড সিস্টেম।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘গত কয়েকদিনে ওসি প্রদীপকে সাধারণ আসামিদের জন্য বরাদ্দ খাবার দেওয়া হচ্ছে। কোনো আসামি চাইলে কারাগারে থাকা প্রিজনার ক্যাশ (পিসি) বা ব্যক্তিগত তহবিল থেকে টাকা খরচ করে ভালো মানের খাবার কিনতে পারেন। ওসি প্রদীপ গত কয়েকদিনে কারা ক্যান্টিন থেকে বিশেষ কোনো খাবার কেনেননি। তার পিসিতে কতো টাকা আছে বা আদৌ আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই।’

কারাগারের ভেতরকার সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওসি প্রদীপের সঙ্গে সম্প্রতি কোনো নিকটাত্মীয় দেখা না করায় প্রদীপের প্রিজনার ক্যাশে (পিসি) কোনো টাকাও জমা হয়নি। আবার ডাকযোগে মানি অর্ডারও আসেনি।

গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) অনেকটা হঠাৎ সিদ্ধান্তে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয় ফাঁসির দণ্ড পাওয়া বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীকে। এর মাত্র ৫ দিন আগে তাদের কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়েছিল।

বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রদীপ ও লিয়াকতকে বহনকারী একটি প্রিজনভ্যান কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে পৌঁছায়। পরে তাদের সেখানকার হাইসিকিউরিটি পার্ট-৪-এর একটি কনডেম সেলে তাদের রাখা হয়।

সংশ্লিষ্টরা তখন জানান, ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতকে আরও বেশি নিরাপত্তার মধ্যে রাখতেই কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগারে নেওয়া হয়েছে।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মাথায় ঝুলছে ফাাঁসির আদেশ। গত ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল তার আদেশে এই দুজনের মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও সিনহাকে হত্যায় সহযোগিতা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের তিন সোর্সকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!