কাপাসগোলায় কবরের উপর হচ্ছে জেভকোর ফ্ল্যাটবাড়ি!

ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা

কাপাসগোলায় পুরনো কবর দখল করে ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করছে জেভকো প্রপার্টিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। অনেক বছরের পুরনো এ এ জমিতে বছর দুয়েক ধরে দখল চালিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১০/১২টি দোকানও। অথচ জমিটি বরাদ্দ ছিল ‘কাচ্চি মেনন ট্রাস্টের কবরস্থান’ হিসেবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এসব তথ্য দেয় কাপাসগোলা এলাকার স্থানীয়রা।

শুক্রবার (১৩ মার্চ) জুমার নামাজের পর মানবন্ধন করেছে বৃহত্তর কাপাসগোল মহল্লা কমিটির স্থানীয় বাসিন্দারা। কাপাসগোলা মহল্লা কমিটির সহ-সভাপতি হাজী আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও হাজী সেলিম রহমানের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, একরাম হোসেন, আবু আহম্মেদ, সিদিকুল ইসলামসহ বৃহত্তর কাপাসগোলার পশ্চিম কাপাসগোলা মহল্লা কমিটি, পূর্ব কাপাসগোলা মহল্লা কমিটি,দক্ষিণ কাপাসগোলা মহল্লা কমিটিসহ মোট ৬টি মহল্লা কমিটির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

ওই মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে ‘কাচ্চি ট্রাস্টের কবরস্থান’ নামে বরাদ্দকৃত কবরের জায়গা আত্মসাতের চেষ্টা করে আসছে সিরাজুল ইসলামসহ বহিরাগত একটি চক্র। ২০১৮ সালের দিকে ওই জমির ‘ভুয়া’ কাগজপত্র দেখিয়ে সেখানে জেভকো প্রপার্টিজের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের চেষ্টা করেছিল ওই চক্রটি। তবে স্থানীয়দের বাধার মুখে ওই সময় নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল তৎকালীন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তবে সম্প্রতি ‘ভুয়া’ কাগজপত্র দেখিয়ে আবারও সেই বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণের পায়তারা করছে চক্রটি।’

বৃহত্তর কাপাসগোলা এলাকার বাসিন্দাদের দাবি— ওই জায়গায় যারা কবরস্থানের মালিক ছিলেন তারা কেউ বেঁচে নেই। কবরস্থানের সামনে দশটি দোকান ছিলো যা কবরস্থান, মসজিদ ও এতিমখানা পরিচালনার কাজে ব্যয় করার কথা ছিল। ট্রাস্টিদের দলিলে উল্লেখ আছে এসব কথা। ট্রাস্টিদের মৃত্যুর পর ইসমাইল নুর মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি ট্রাস্টের দেখাশোনা করতেন। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর কবরস্থানের সামনের দোকানগুলো পরিণত হয় পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে।

এরপর ১৯৭৮ সালের দিকে ইসমাইল নুর মোহাম্মদের মেয়ে আমেনা এরশাদ তৎকালীন জেলা প্রসাশক বরাবর দোকানগুলো পরিচালনার জন্য আবেদন করেন। যা ১৯৮৩ সালে শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদিত হয়। মূলত এরপর থেকে বদলে যেতে থাকে প্রেক্ষপট।

সর্বশেষ বছর দুয়েক আগে রাস্তার কাজ সম্প্রসারণে কবরস্থানের সামনে পুরাতন দোকানগুলো ভাঙ্গা পড়লে সেখানে কবরের উপরই নির্মাণ হয় ১০/১২ টি দোকান। পরে দোকানের পেছনের অংশে বহুতল ভবন নির্মাণে জেভকো প্রপার্টি নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় আমেনা এরশাদ। তখন বৃহত্তর কাপাসগোলা এলাকার স্থানীয়দের বাধার মুখে থেমে গিয়েছিল কবরের জমিতে বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ।
কাপাসগোলায় কবরের উপর হচ্ছে জেভকোর ফ্ল্যাটবাড়ি! 1

কবরস্থান রক্ষা কমিটির আহ্বাবায়ক আইনুল হক বলেন ‘কিন্তু সম্প্রতি আমেনা এরশাদের মৃত্যুর পর তার স্বামী সিরাজুল ইসলাম এই কবরস্থানের জায়গা দখল করে ফ্ল্যাট নির্মাণের চেষ্টা করছে।’

মানববন্ধনে দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ বলেন, ‘কবরস্থান দখল করে আবাসিক স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করছে একটি দুষ্ট চক্র। কিন্তু এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি রক্ষা করা হোক কবরের জমি।’
প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দীর্ঘদিনের এই কবরের জমি রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু বলেন, ‘এর আগেও এই জমি দখল করে আবাসিক ভবন নির্মাণের পায়তারা করেছিল একটি চক্র।’

কাপাসগোলা মহল্লা কমিটির সহ-সভাপতি আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেলিম রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, কাউন্সিলর পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, চকবাজার ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি একরাম হোসেন, আবু আহম্মেদ, সিদ্দিকুল ইসলাম, কাপাসগোলা কবরস্থান রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক আইনুল হক, জামতলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ফয়জুল করিম, সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক মঞ্জু, মো. ইব্রাহীম, কবরস্থান রক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সিদ্দিকুল ইসলাম, মনজুর আলম, মনছুর আলম, নুরুল হুদা বাঁচা, ইউসুফ শরীফ, আবু তৈয়ব, মোহাম্মদ সাইফুল, দিদারুল আলম, মো. আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ রমজু, মোহাম্মদ তারেকসহ কাপাসগোলার ৬ মহল্লা কমিটির নেতৃবৃন্দ।

এএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!