করোনার একটি সনদের জন্য রেমিটেন্সযোদ্ধাদের দিনরাত একাকার

সোমবার (২৭ জুলাই) সকাল ৯ টায় ফ্লাইট সিডিউল রয়েছে রাউজানের নাছির উদ্দিনের। কিন্তু রোববার (২৬ জুলাই) রাত ১২টায়ও করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট হাতে আসেনি তার। তিনি বললেন, ‘আমাদেরকে রেমিটেন্সযোদ্ধা বলা হয়। কিন্তু আমাদের পদে পদে হয়রানিতে ভুগতে হয়। করোনা সার্টিফিকেট না পেলে হয়ত বিদেশেও যেতে পারবো না। সকাল থেকে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সার্ভারে সমস্যা হচ্ছে। তাই দিতে সময় লাগছে। এখন আমি কী করবো কোথায় যাবো দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’

এভাবে করোনা পরীক্ষার সনদ নিতে গিয়ে অন্তহীন হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর বিদেশগামী ফ্লাইট চালু হয়েছে। এর ফলে প্রবাসীরা দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন। কিন্তু বিদেশের এয়ারপোর্টে তাদের বাধ্যতামূলক দেখাতে হবে করোনা পরীক্ষার সনদ। এই রিপোর্টের কার্যকাল ৯৬ ঘণ্টা। ক্ষণগণনা শুরু হয় স্যাম্পল কালেকসন করার পর থেকে। প্লেনের টিকেট কনফার্ম করা হয়— সেই হিসাব মাথায় রেখে।

সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে বিদেশ গমনকারীদের জন্য কোভিড পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ২৩ জুলাই থেকে। এ সঙ্গে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে— যাত্রার ৭২ ঘণ্টা আগে কোন নমুনা সংগ্রহ করা যাবে না এবং যাত্রার ২৪ ঘন্টা আগে রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদেশগামী যাত্রী যে জেলার, সেই জেলার সিভিল সার্জন অফিসে স্থাপিত পৃথক বুথে তাদের নমুনা দেবেন।

করোনার একটি সনদের জন্য রেমিটেন্সযোদ্ধাদের দিনরাত একাকার 1

জানা গেছে, বিদেশগামী প্রায় সব ফ্লাইটই এখন ছাড়ছে ঢাকা থেকে। ফলে যাত্রী যদি চট্টগ্রাম, সিলেট বা অন্যান্য জেলার বাসিন্দা হয়—তার ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। এ ধরনের যাত্রীকে নিজ শহর থেকে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে নিয়েই ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন বিপত্তি— যাত্রীর ইন্স্যুরেন্স পলিসি (বীমা)।

চট্টগ্রামে প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষার জন্য টাকা জমা ও নাম নিবন্ধন করতে হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। প্রবাসীদের সেবা দেওয়ার জন্যে ‘প্রবাসী ডেস্ক’ খোলা হয়েছে সেখানে।

রোববার (২৬ জুলাই) করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল বিকেলে। কিন্ত রাত ১১টা হয়ে গেলেও রিপোর্ট ডেলিভারি দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। পরে বলা হয়, সোমবার (২৭ জুলাই) ভোর চারটায় রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হবে। সেই রিপোর্টের অপেক্ষায় রাতে খোলা আকাশের নিচে চেয়ার পেতে অপেক্ষা করছিলেন অনেকেই। এরা সবাই ‘রেমিটেন্সযোদ্ধা’। অপেক্ষায় ছিলেন রিপোর্ট হাতে পাওয়ার জন্য। এটা হাতে নিয়েই হয়তো অনেককে সরাসরি ছুটতে হবে বিমানবন্দর অভিমুখে। তাদের সবার ফ্লাইট সোমবার (২৭ জুলাই) সকাল ৯টায়, কারও কারও ফ্লাইট বেলা একটায়। এ এক শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা, সঙ্গে টেনশন। ফ্লাইট যদি ‘মিস’ হয়, তাহলে অনেক টাকা গচ্ছা তো যাবেই, সঙ্গে টিকেটের টাকাও মার যাবে।

ফটিকছড়ি থেকে আসা যাত্রী মোহাম্মদ কাঞ্চন মিয়া বলেন, ‘আমার টিকিট কনফার্ম হয়েছে মঙ্গলবার (২৮ জুলাই)। কিন্তু আজকে (রোববার) এসেছি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। সেখানে সিরিয়াল দিতে হচ্ছে করোনা স্যাম্পল দেওয়ার জন্য। স্যাম্পল নেবে সোমবার সকালে। কিন্তু সিরিয়ালেও অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।’

এনামুল করীম নামের অপর এক যাত্রী দাবি তুললেন, ‘বিদেশগামী যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে প্রয়োজনে লোকবল বাড়াতে হবে। বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্যাম্পল কালেকশন বুথের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সার্ভারের সমস্যা হচ্ছে। সার্ভারে সমস্যার কারণে রিপোর্ট দিতে পারছিল না সিভিল সার্জন অফিস।’

তিনি বলেন, ‘রোববার ২৮১ জনের রিপোর্ট দেওয়ার কথা থাকলেও রিপোর্ট আসে মাত্র ৬৭টি। এর মধ্যে আবার কিছু রিপোর্ট ডাবল চলে এসেছে। সেগুলো আমরা সব ঠিকঠাক করে দিচ্ছি।’

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!