করোনাকালেই চীনে গেল কাঁকড়া ও কুচিয়ার ১০০ কোটি টাকার চালান

চট্টগ্রামসহ তিন জায়গার ল্যাবে বসেছে নতুন প্রযুক্তি

নয় মাস বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশের কাঁকড়া ও কুচিয়া (কুঁচে) আবার যাচ্ছে চীনে। গত ২ জুন থেকে দুই মাসে চীনে গেছে খাবার হিসেবে সেখানে বেশ জনপ্রিয় কাঁকড়া ও কুচিয়ার ৩৪টি চালান। এরই মধ্যে রপ্তানির সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম ছাড়াও সাভার ও খুলনায় মৎস্য অধিদপ্তরের তিনটি ল্যাবরেটরিতে বসেছে নতুন প্রযুক্তি।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, নোয়াখালীর পাশাপাশি হাতিয়া উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রচুর কাঁকড়া পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বেশি কাঁকড়া পাওয়া যায় সুন্দরবন এলাকায়।

মৎস্য অধিদপ্তর ও বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। এর মধ্যে সামুদ্রিক কাঁকড়া ১১ প্রজাতির। তবে রপ্তানি হয় মূলত শীলা ও সাঁতারু কাঁকড়া। বর্তমানে শুধু শীলা কাঁকড়াই রপ্তানি হচ্ছে। জীবন্ত ও হিমায়িত—দুভাবেই শীলা কাঁকড়া রপ্তানি হয়। জীবন্ত কাঁকড়া বিমানের কার্গো ফ্লাইটে গেলেও হিমায়িত কাঁকড়া যায় নৌবন্দর দিয়ে।

চীন বাংলাদেশের কাঁকড়ার সবচেয়ে বড় বাজার হলেও রপ্তানি হয় হংকং, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, জাপান, মালয়েশিয়াসহ আরও কিছু দেশে।

করোনাকালেই চীনে গেল কাঁকড়া ও কুচিয়ার ১০০ কোটি টাকার চালান 1

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ডলারের কাঁকড়া রপ্তানি হয়। তবে করোনা মহামারির কবলে পড়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সেই অংক নেমে আসে ১২ মিলিয়ন ডলারে। ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে বিদেশে প্রথম কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়।

আগে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই চীনে কাঁকড়া ও কুচিয়া রপ্তানি করা যেতো। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে রপ্তানি হওয়া একটি জীবন্ত কুঁচিয়ার কনসাইনমেন্টে মাত্রাতিরিক্ত এস্ট্রাডিওল এবং তিনটি জীবন্ত কাঁকড়ার কনসাইনমেন্টে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম পায় চীন। এরপর চীন কিছু শর্ত আরোপ করে। তখন মৎস্য অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরি থেকে সার্টিফিকেট ইস্যু করার নিয়ম চালুর পর রপ্তানি ফের সচল হয়। তবে এরই মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিএম ট্রেডার্স নামের এক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জাল সার্টিফিকেট বানিয়ে জালিয়াতি করার পর চীনে আবার রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওই প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।

গত ৩০ মার্চ জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাস্টমস অব চায়না (জিএসিসি) তাদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ থেকে ভোজ্য জলজ প্রাণী রপ্তানির জন্য বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় রয়েছে এমএম এন্টারপ্রাইজ, এসআর ট্রেডার্স, রয় ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জেনিক ইন্টারন্যাশনাল, এমএস আরাফ ইন্টারন্যাশনালের নাম।

বর্তমানে কাঁকড়া ও কুচিয়া রপ্তানির আগে মৎস্য অধিদপ্তরের তিনটি ল্যাবরেটরি থেকে ইংরেজি ও চীনা ভাষায় সার্টিফিকেট নিতে হচ্ছে। এই সার্টিফিকেট পেতে আবার ১২-১৩টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হচ্ছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!