ইমোতে টোপ ফেলে ডাক্তারের আপত্তিকর ভিডিও, চট্টগ্রাম-ঢাকা থেকে তরুণীসহ দুজন ধরা

চট্টগ্রাম-ঢাকায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমো ও মেসেঞ্জার ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই প্রতারকচক্রে মেয়েরাও সক্রিয়। প্রতারকদের এই চক্রটি শুরুতে বন্ধুত্বের টোপ ফেলে ইমোতে যোগাযোগ করে ঘনিষ্ঠ হয়। সম্পর্কের একপর্যায়ে তাদের একান্ত সময়ের ভিডিও আর আপত্তিকর ছবি ধারণ করে রাখে বিশেষ কৌশলে। এরপর অনলাইনে সেসব ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করে টাকা হাতিয়ে নেয়। চক্রটি এজন্য ইমো-ফেসবুক-মেসেঞ্জারে অনেকগুলো আইডি ব্যবহার করে। টার্গেট করা ব্যক্তি থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তারা ওই আইডিগুলো পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়।

এ ধরনের একাধিক ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সাইবার টিম অনুসন্ধানে নামে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চিকিৎসক সাইবার পুলিশ সেন্টারের ফেসবুক পেজে অভিযোগ করেন, অজ্ঞাতনামা এক লোক তার এবং তার প্রাক্তন স্ত্রী মারিয়া ইসলাম নিকিতার একান্ত মূহূর্তের ভিডিও তার টেলিগ্রাম এবং তার বর্তমান স্ত্রীর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে জানায়, তাদের দাবি করা টাকা না দিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ভিডিওগুলো ভাইরাল করে দেওয়া হবে।

সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) এই অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) ঢাকার কাফরুল থেকে তমালিকা আক্তার (২৪) নামে এক তরুণী এবং সিআইডি চট্টগ্রামের একটি টিমের সহায়তায় খুলশী থানা এলাকা থেকে আবু সাঈদ রনি (২৮) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফির কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। মোবাইল ফোনগুলোতে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির কলাবাগান থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে।

পরে প্রতারকচক্রের এই সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া তমালিকা আক্তার (২৪) ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার চিকিৎসকের প্রাক্তন স্ত্রী মারিয়া ইসলাম নিকিতা পরস্পর বন্ধু। তারা দুজনেই বিভিন্ন ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে ইমো ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কলে আসতে প্রলুব্ধ করে। এ সময় তারা বিশেষ মূহূর্তগুলো গোপনে ধারণ করে রাখে।

একইভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিও কলের বিশেষ মূহূর্তগুলোও গোপনে ধারণ করে রাখেন মারিয়া ইসলাম নিকিতা। পরে রেকর্ড করা সেই ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করলে ওই চিকিৎসক নিকিতাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেলে মারিয়া ইসলাম নিকিতা তার বন্ধু তমালিকা আক্তারকে (২৪) আপত্তিকর ভিডিওটি সরবরাহ করেন। তমালিকা আবার সেই ভিডিও চট্টগ্রামে অবস্থানকারী তার প্রেমিক আবু সাঈদ রনিকে (২৮) সরবরাহ করেন।

চট্টগ্রামের বাসিন্দা আবু সাঈদ রনি বিশেষ মুহূর্তের ওই ভিডিওটি সেই চিকিৎসক ছাড়াও তার বর্তমান স্ত্রীর টেলিগ্রাম ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে তাদের কাছে টাকা দাবি করেন।

চট্টগ্রামের রনি ও ঢাকার তমালিকা দুজনেই সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থান করে আরও অনেকের সঙ্গে এভাবে ইমো ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ভিডিওকলে আপত্তিকর মুহূর্ত রেকর্ড করে রেখে তাদের ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রোর এসপি শাহনেওয়াজ খালেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েরাও এখন নানাভাবে ব্ল্যাকমেইলিং করে অর্থ হাতানোর মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এদের অনেকে বিয়ের নামেও নিত্যনতুন প্রতারণায় নেমেছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!