চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার ১৭ ওয়ার্ডের ফুলতলা ড্রেনের পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ সিডিএ করবে নাকি সিটি কর্পোরেশন করবে— এই দ্বন্দ্বে ড্রেনটি ভরাটের উপক্রম হয়েছে। তার ওপর শাকসবজি ও মাছ বিক্রেতাদের ফেলা উচ্ছিষ্ট ময়লা-আবর্জনা আর পলিথিনের স্তুপে ড্রেনের বেহাল দশা।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে কে বি আমান আলী সড়ক এলাকায় গিয়ে ফুলতলা ড্রেনের এই চিত্র দেখা গেছে। শাকসবজি, মাছের উচ্ছিষ্ট ও পলিথিন জমে ভরাট হয়ে গেছে ড্রেনটি। পুরো ড্রেনের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত ময়লা আবর্জনার জমাট বাঁধা স্তূপ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। ফলে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। আটকে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এই দুর্গন্ধের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ড্রেনে পাশের স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
সীমানা নির্ধারণ করা উভয়পাশ আর মাঝখানে শাকসবজি, ময়লা আবর্জনা ও পলিথিনের স্তূপ ছাড়া আর কিছু দেখতে পাওয়া যায় না। ড্রেনটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপের শেষ নেই।
৮ম শ্রেণির স্কুল শিক্ষার্থী সাইমা সুলতানা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানাল, ‘এই ড্রেনের আশপাশে কতগুলো স্কুল মাদ্রাসা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। আমাদের চলার রাস্তা এটাই। নাক চেপে পথ চলতে হয়। ক্লাস চলাকালীন ড্রেনের দুর্গন্ধে বসা যায় না।’
ড্রেনটিতে ময়লা-আবর্জনা পলিথিনের স্তূপের দুর্গন্ধ আর মশা-মাছিতে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দা সায়েদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘এই ড্রেন দিয়ে চকবাজার এলাকার সব পানি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু ড্রেনটিই ময়লার স্তূপের ভরাট হওয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। এ জন্য কাকে দোষ দেবো। এখন ড্রেনটির পাশ দিয়ে চলাফেরা করা কষ্টকর। দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির উপদ্রব দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সবজি বিক্রেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই ড্রেনটির এমন অবস্থার জন্য আমরা ব্যবসায়ীরাই দায়ী। কিন্তু আমরাও কী করবো। শাকসবজি বা মাছের উচ্ছিষ্ট ফেলার আর কোন জায়গা বা ডাস্টবিন এখানে নেই। যেজন্য সব আবর্জনা এই ড্রেনে বা রাস্তায় আমাদের ফেলতে হয়। সিটি কর্পোরেশন রাস্তার ময়লার স্তূপগুলো দিন শেষে নিলেও ড্রেনের আবর্জনা আর কেউ পরিষ্কার করে না। এখন ড্রেনের দুর্গন্ধে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে চসিক পরিচ্ছন্ন বিভাগের উপপ্রধান মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘যদিও এই কাজগুলো সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু বর্তমানে ৩ ফুটের বেশি ড্রেনগুলো সিডিএর আন্ডারে দেওয়া হয়েছে। সিডিএ তাদের নিয়ম অনুযায়ী কাজগুলো সম্পূর্ণ করছে। এজন্য আমরা এখন আর বড় বড় ড্রেনের প্রকল্পগুলোতে হাত দিচ্ছি না। ছোটখাটো যে খাল বা ড্রেন আছে ওগুলো আমাদের জনবল দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
চসিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল শৈবাল দাশ সুমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন সব প্রকল্প সিডিএর কাছে। তারপরও সব কাউন্সিলর সিডিএর সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি । সিডিএ বড় বড় ড্রেনগুলোতে বর্জ্য অপসারণ ও মাটি উত্তোলন করে সেল্ট বসাবে। তাছাড়া যাতে কেউ ড্রেনে বা নালায় ময়লা আবর্জনা ফেলতে না পারে এই ধরনের ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ওই এলাকায় সব ধরনের অবৈধ দোকানপাট থেকে বাজার দখলের যেসব বিষয় আছে তালিকা করে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছি। উচ্ছেদ পরবর্তী কিছুটা সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করি।
স্থানীয় বাসিন্দা নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পাচঁলাইশ থেকে শুরু করে বহদ্দারহাটের মোড় নিয়ে চকবাজারের সব পানি এই ফুলতলা ড্রেন দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু অবৈধ দোকানপাটের সমস্ত ময়লা আবর্জনা এই ড্রেনে ফেলার কারণে ড্রেনটি ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে।’
১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম আরিফুল ইসলাম জানান, ‘বড় বড় ড্রেন বা খাল সিডিএর আন্ডারে চলে গেছে। সিডিএর সকল প্রকল্প সেনাবাহিনী করেছে। যার কারণে আমরা কিছুই করতে পারছি না। আমি এই ফুলতলা ড্রেনসহ আরও কিছু প্রকল্পের জন্য সিডিএর কাছে আবেদন করেছি। সেনবাহিনীর সাথে মিটিং হয়েছে তারা পরিদর্শনের জন্য আসবে। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এসএ