আত্মহত্যাকারী চবি ছাত্রের সেই চিরকুট ঘিরে রহস্য, কী ছিল তার ‘অসৎ’ পথ?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের পাশে একটি কটেজ থেকে অনিক চাকমা নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তৈরি হয়েছে রহস্য। ওই শিক্ষার্থীর মরদেহের পাশে পাওয়া ৬ পৃষ্ঠার চিরকুটটি ঘিরে এই রহস্য তৈরি হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনায় কোনো এক রহস্যজনক কারণে স্থানীয় থানার পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, এমনকি অনিকের পরিবারও আত্মহত্যার এই ঘটনার রহস্য বের করতে উদ্যোগী অবস্থায় নেই। তাছাড়া ৬ পৃষ্ঠার চিরকুট অনিক চাকমার লেখা কিনা— সেটাও এখন পর্যন্ত শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আত্মহত্যাকারী চবি ছাত্রের সেই চিরকুট ঘিরে রহস্য, কী ছিল তার ‘অসৎ’ পথ? 1
আত্মহত্যাকারী চবি ছাত্রের সেই চিরকুট ঘিরে রহস্য, কী ছিল তার ‘অসৎ’ পথ? 2

সোমবার (৩ জানুয়ারি) দুপুর একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের বিপরীতে এস আলম কটেজের ২১২ নং কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।

এ দিকে তার মরদেহের পাশে যে চিরকুট পাওয়া গেছে তা ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। চিরকুটের একটি অংশের সাথে অপর অংশের মিল নেই। এছাড়া বেশকিছু লেখা অস্পষ্টও। চিরকুটের শুরুতেই তিনটি ক্রম নম্বর দিয়ে তিনজনের নাম লেখা হয়েছে। নামের পাশে কিছু সংখ্যা বসানো আছে।

আবার চিঠির এক জায়গায় লেখা আছে ২০২১ সালের শেষ ৩/৪ মাস ‘কিছু একটা’ করার কারণে তার সবকিছু চুরমার হয়ে গেছে। এছাড়া আরেক জায়গায় লেখা সে টাকা উপার্জন করতে চেয়েছে। তবে যে পথে উপার্জন করতে চেয়েছে তা অসৎ পথ। এরকম অসংখ্য রহস্য রয়েছে তার ‘লেখা’ ওই চিরকুটে।

এ দিকে তার সহপাঠীরা জানান, অনিক আর্থিক অনটনে ভুগতো। বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলতো।

বিশ্বিবদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ দেখতে পাই। মরদেহের পাশে একটা চিরকুটও পাওয়া গেছে। আমরা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি। মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘লাশ নামানোর পর তার কাজিন লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।’

অনিকের চিরকুটে যা লেখা আছে—

৯৮ সুপ্তা > ২০০
৯৯. মাথিন 7500
১০০. ফুংগ্রে 1200/=
আমি অত্যন্ত লজ্জিত। আমি আপনাদের সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি নিজেকে অত্যন্ত ঘৃণা করি। আমার মা বাবা, বড় ভাইবোন, ছোট ভাইবোন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। জানি আমার কথা শুনলে আপনাদের ঘৃণা লাগবে। আমি নিজেকে, আমার মাকে আর আমার বাবাকে অনেক ভালোবাসি। আর আদরের ছোটভাইকে ভালবাসি।

সেজন্য বাবা ও মা আমার জন্য অনেক করেছে। আমি যদি এই ভুলটা ভার্সিটিতে এসে ২০২১ সালে (শেষ ৩-৪ মাসে) না করতাম তবে অনেক কিছুই হতো। স্বপ্ন সব সুরমার (চুরমার) হয়ে গেলো।

বন্ধুরা আমাকে বিশ্বাস করে দিয়েছে। আমি প্রতিদান দিতে পারিনি। বড় ভাইবোন ছোটভাইবোন সবার কাছেই আমি ঘৃণ্য হয়েছি। আমি টাকা গরীবদের দান করব করব করেও হয়ে উঠল না। আবার এটা আমি কাউকে বলতেছি না যে এটা আমার ইচ্ছা ছিল। আমার স্বপ্ন ছিল আমি সাহায্য করব গরিব দুঃখীদের। আরে কী বলছি?
এটা তো আমার বলা উচিত না তবুও বললাম।

আমি টাকা উপার্জন করতে চেয়েছিলাম যা অসৎ পথ। আমি টিউশন করতাম তবু অনেক হতো। বড় ভাই বাবা মার কাছে আমি খুব দুঃখিত। আমি এমনি খুব ডিপ্রেশনে ছিলাম। আমি ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকে ডিপ্রেশনে আসি। আমি সেই ক্লাস টেন পর্যন্ত ভাল খেলাধুলা করেছি। বন্ধুবান্ধব পেয়েছি। তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। যখন কলেজে আসি তখন আমি ডিপ্রেসড থাকতাম। যার ফলে আমার প্যারালাইসিস হয়েছে।

আমি মিথ্যে কথা বলতে পারতাম না যার জন্য বকা খেতাম বাড়িতে। আমার অত্যন্ত ভালোবাসা পেতাম মার কাছ থেকে। আমার মা আমাকে খাওয়া দাওয়া করিয়েছে অসুখের সময়। মাকে আমি ভুলতে পারব না। বাবা ও মা অনেক কিছু করে আমার জন্য। যার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল। আমি মিথ্যা কথা বলতে পারতাম না। যদি না বলা শুরু করতাম ২০২১ সালে, তাহলে জীবন কতইনা ভালো হতো। এখন একটা মিথ্যা কাটতে আমাকে অনেক মিথ্যা বলতে হয়েছে।

আমি যদি বন্ধুবান্ধবদের সাথে * ভালোভাবে পারতাম তাহলে এটা হতো না। আমি রুমে থাকি। এজন্য আমার নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ইচ্ছে করতো।

আমি ছোটভাইদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমার একদম অযোগ্য তবুও আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

সবার কাছে আমি এখন ঘৃণার পাত্র। বাবা মাকে প্রণাম করে সবাইকে ছেড়ে গেলাম। আমি বুঝেও না বুঝার মতো করেছি। যেতে হবে এখনই।’

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!