অসহ্য গরমে সীমাহীন যানজট, দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পথে পথে

রোববার (৪ এপ্রিল) চট্টগ্রামে তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি। কিন্তু তেজ ছিল ৪০ এর কাছাকাছি। এমন গরমে মানুষ যখন ছটফট করছে তখন রাস্তায় বের হওয়া লোকজন পড়েছে সীমাহীন যানজটের কবলে। দিনভর নগরের প্রায় সব রাস্তায় অসহনীয় যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হয় গাড়ি চালক-যাত্রীদের। এর সাথে যোগ হয় চরম পরিবহণ সংকট। ফলে লকডাউন শুরুর আগে দুর্ভোগময় এক দিন কাটল নগরবাসীর।

সোমবার সকাল থেকে শুরু হচ্ছে সাতদিনের লকডাউন। এ ঘোষণায় শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরতে শুরু করে লাখো মানুষ। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় করেন বাস কাউন্টারে। আবার ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে আসতে থাকেন বাইরে থাকা লোকজন। ফলে নগরের তিন প্রবেশ মুখে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জন ও যানজট।

একই সময়ে লাখো কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ অফিস শেষে বাড়ি ফিরতে গিয়ে পড়েন পরিবহণ সংকটে। এ সুযোগে বেড়ে যায় বাস-রিকশা-সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া। পরিবহণ সংকট এতটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যে, দুদিন আগে দেয়া অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা পালন করতে পারেনি বাস চালক-সহকারীরা। যাত্রীদের চাপে তাদেরকে গাড়ি ভর্তি যাত্রীই নিতে হয়েছে। যদিও এ সময় বর্ধিত দ্বিগুণ ভাড়ায় আদায় করে তারা। এ নিয়ে বিভিন্নস্থানে যাত্রীদের সাথে চালক-সহকারীর বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে।

সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে অনেক বাড়ি ফেরা মানুষকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। অনেকে ‘শেয়ারে’ সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে যাত্রা করেছেন। তবে অনেক যাত্রীই দীর্ঘক্ষণ যানজটে বসে থেকে অর্ধেক পথেই গাড়ি থেকে নেমে গেছেন।

নগরের আগ্রবাদ, বন্দর, সিমেন্ট ক্রসিং, টাইগার পাস, কাজির দেউড়ি, নিউমার্কেট, জিইসি মোড়, বহদ্দারহাট সহ বিভিন্ন জায়গায় যানজটের কারণে সড়কে যানবাহনের লম্বা লাইন সৃষ্টি হয়। সময় বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ঘরে ফেরা মানুষের জটলা। সন্ধ্যা সাতটার দিকে নগরের নিউমার্কেট, বন্দর, আগ্রাবাদ, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট এলাকায় ঘুরে দেখা যায় একদিকে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষারত মানুষের জটলা অন্যদিকে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন।

কর্ণফুলী ব্রিজের শহরপ্রান্তে দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী মানুষের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। লোকে লোকারণ্য ছিল পুরো গোলচত্বর এলাকা। পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালীগামী মানুষকে পরিবহণ সংকটে কাটাতে হয় দীর্ঘসময়। এখানেও বাড়তি ভাড়া নিয়ে ছিল অভিযোগ আর ক্ষোভের বহিপ্রকাশ।

কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালীগামী যাত্রীদের ভিড় থাকলেও সিএনজি অটোরিকশা থাকায় খুব একটা দুর্ভোগ দেখা যায়নি। অক্সিজেন চত্বরে হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিগামী যাত্রীদের চাপ ছিল। তবে এখানে যানজটের কারণে বেশি কষ্ট ভোগ করতে হয় অন্যান্য যাত্রীদেরও।

নগরে প্রবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক একে খান মোড়। ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে আসা যাওয়ার এ সড়কের চাপ পড়ে জিইসি মোড় পর্যন্ত। দিনভর যানজট সামলাতে ব্যস্ত ছিল ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু লোকবল সংকট দিয়ে চলা ট্রাফিক বিভাগ নগরের যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, লকডাউনের খবরে নগরে যানবাহন আর যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে। ফলে যথেষ্ট ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শপিং মল ও কাঁচাবাজারে যাওয়া ক্রেতার সংখ্যাও হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ দুর্ভোগ অসহনীয় মাত্রা ধারণ করেছে বলে মনে করছেন তারা।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!