অবসরে যাওয়ার দুই বছর পর এল ‘অনিয়মের’ অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাণ্ড

দাপ্তরিক নিয়ম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই শেষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ‘ক্লিয়ারেন্স’ নিয়েই অবসরে গিয়েছিলেন মুহাম্মদ শামশুল হুদা সিদ্দিকী। অবসরে যাওয়ার পর দুই বছরের মাথায় হঠাৎ করেই ‘একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল পরিশোধ না করার অভিযোগ’ এনে শোকজ করা হয় চসিকের যান্ত্রিক বিভাগের সাবেক এই প্রকৌশলীকে। বিস্মিত ওই প্রকৌশলী জানালেন, অবসরে যাওয়ার প্রায় ২ বছর পর প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটির টাকা মিলে প্রায় ৮০ লাখ টাকা দিতে দেরি করতেই এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।

চসিকের সাবেক এই প্রকৌশলী বলেন, ‘দুই বছর আগের কথা। সিটি কর্পোরেশনের সব নিয়ম মেনে ও সেখানকার দপ্তরের দেনা-পাওনা সব যাচাই-বাছাই করার পর আমাকে অবসর দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করেই আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি শুধু ভিত্তিহীন নয়, হাস্যকরও। চসিকের ওই বকেয়া বিলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ওই সময় বিল প্রস্তুত ও পাথর রিসিভ করার দায়িত্বে ছিলেন পুরকৌশল বিভাগের তৎকালীন সহকারী স্টোরকিপার নুরুল ইসলাম। বিষয়টির সম্পূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন ওই বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুল হুদা। হয়ত তারা দুজনই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী অবসর আইন, ১৯৭৪ (দ্বাদশ আইন ১৯৭৪) এর ৭ ধারা অনুযায়ী চাকরির বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় যথাযথ নিয়মেই গত ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বরে আমাকে চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়।’

সাবেক প্রকৌশলী শামশুল হুদা সিদ্দিকী বলেন, ‘চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর অবসর ভাতার টাকা না পেয়ে আমি সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) বরাবরে প্রভিডেন্ট ফান্ড গ্র্যাচুইটির বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দিই। আমার চিঠি পেয়ে অবসর গ্রহণের পর কেন এতোদিন প্রভিডেন্ট ফান্ড গ্র্যাচুইটির টাকা প্রদান করা হয়নি— তার কারণ জানতে চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ চিঠি দেয় সিটি কর্পোরেশনকে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়াতেই মূলত তারা আমার অবসর ভাতার বিষয়টি আরও দীর্ঘায়িত করতে এসব ষড়যন্ত্র রচনা করছে।’

অন্যদিকে শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামশুদ্দোহা বলেন, ‘শামশুল হুদা সিদ্দিকী চাকরিতে থাকাকালীন ৮ হাজার ৬৩৯ দশমিক ৩৫টি সিএফটি পাথরের বিল পাইনি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের একজন কন্ট্রাক্টরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে শোকজ করা হয়। উনি সেই শোকজের জবাব দিয়েছেন। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

গত ২৩ জুলাই চসিকের পাঠানো ওই শোকজ লেটারে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল যান্ত্রিক শাখার অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে মের্সাস শাহ আমানত ট্রেডার্স কর্তৃক ৮,৬৩৯.৩৫টি সিএফটি পাথর যার বর্তমান বাজার মূল্য ১২ লাখ টাকা, হ্যান্ডস্লিপের মাধ্যমে গ্রহণ করেন— অথচ এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই স্টোরের লেজারে। চিঠি প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা প্রদানের অনুরোধ করা হল।’

মুআ/এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!