অবশেষে ‘উচ্চপদস্থ প্রতারক’ মোজাম্মেল ধরা

তিনি কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, কখনো নৌ বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকতা আবার কখনো ২৫তম বিসিএস এর পুলিশ অফিসার। নাম তার মোজাম্মেল। একই নামে তিন উচ্চপদস্থ অফিসার একজন মোজাম্মেল।

হ্যাঁ, ঘটনাটা প্রথমে শুনতে একটু অদ্ভুত বা অবাস্তব মনে হলেও বাস্তবে একজন মোজাম্মেল একাই তিনটি পদের মালিক। প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার সময় যখন যে পদবী ব্যবহার করতে হয় তখন সেই পদবী ব্যবহার করে থাকে এই ‘উচ্চপদস্থ প্রতারক’। মূলত তিনি নিজেকে কখনো সচিব, কখনো পুলিশ বা নৌ অফিসার পরিচয় দিলেও বাস্তবে তার কাজ হচ্ছে প্রতারণা।

তবে, শেষমেষ নিজের জালে নিজেই আটকা পড়লেন এ প্রতারক। চট্টগ্রাম নগরীর একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে এক শিক্ষার্থীর পরিবার থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ধরা পড়েন তিনি।

শনিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নগরীর সদরঘাট থানার কামাল গেইট এলাকা থেকে কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে আটক হয় প্রতারক মো. মোজাম্মেল হক।

জানা যায়, চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে এক শিক্ষার্থীর ভর্তি আবেদনপত্রে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের ভুয়া নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে সুপারিশ করা হয়। প্রতারক শিক্ষার্থীর মাকে আশ্বস্ত করে যে, তার ছেলে ভর্তি হতে পারবে এবং তার বিনিময় ১৬ হাজার টাকা দিতে হবে। ছেলেকে মুসলিম হাইস্কুলে ভর্তি করানোর আশা পূর্ণ করতে সম্পূর্ণ টাকা তুলে দেন প্রতারকের হাতে। বিনিময়ে প্রতারক তাকে দেন জেলাপ্রশাসকের স্বাক্ষর করা সুপারিশপত্র।

প্রতারকের দেওয়া সেই সুপারিশপত্রটি যথারীতি পৌঁছায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের হাতে। কিন্তু সেই স্বাক্ষরটি নিয়ে সন্দেহ থাকায় সেটা পরিষ্কার করার জন্য জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হোন মুসলিম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। জেলাপ্রশাসক সুপারিশপত্রটি দেখার পর বুঝতে পারেন যে ঘটনা কী ঘটেছে।

প্রতারণার শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থীর মা, তা বুঝার পরই কোতোয়ালী থানায় করা হয় একটি অভিযোগ, আর সেই অভিযোগের সূত্র ধরে প্রতারক মোজাম্মেলকে আটক করে পাঠানো হয় কারাগারে।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন-‘১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের একটি টিম মোজাম্মেল নামক এক প্রতারককে আটক করে। সে দীর্ঘদিন যাবত ভুয়া পদবী ব্যবহার করে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলো। এরকম এক ক্ষতিগ্রস্থ মহিলার থেকে অভিযোগ পাওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা তাকে আটক করি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

পুলিশ জানায়, প্রতারক মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলসহ আরো একাধিক মামলা রয়েছে। আটক মোজাম্মেল নগরীর কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের হাজী আব্দুল হকের ছেলে। তবে মোজাম্মেল বর্তমানে নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ির মমতাজ ভবনের নীচতলায় ভাড়া থাকেন। আটকের সময় প্রতারক মোজাম্মেলের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি পদবীর একটি ভুয়া ভিজিটিং কার্ড ও এস চ্যানেলের সাংবাদিক পরিচয়ে আরো একটি ভুয়া কার্ড জব্দ করা হয়।

বিএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!