ম্যাচিং ফান্ড নিয়ে দুশ্চিন্তায় চসিক

মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়া এবং পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন অনুসারে গৃহকর আদায় করতে না পেরে আয়ের সাথে ব্যয় মিলাতে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এতে করে আর্থিক সক্ষমতা হারাচ্ছে সংস্থাটি। বিষয়টি নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীনকে ভাবিয়ে তুলেছে। এরমধ্যে আবার মরার উপর খাঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে প্রকল্পের ‘ম্যাচিং ফান্ড’। মেয়র নাছিরের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার এই ফান্ড। কোথা থেকে আসবে এই ফান্ড সেই চিন্তায় এখন ঘুম হারাম নগরপিতার।

প্রসঙ্গত, নগর উন্নয়নে চসিক যেসব প্রকল্প গ্রহণ করে, সেসব প্রকল্পে ২০-২৫ শতাংশ অর্থ চসিককেই বহন করতে হয়। প্রকল্পে চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া অর্থকেই ‘ম্যাচিং ফান্ড’ বলে।

চসিকের হিসাব বিভাগ হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে ৬টি প্রকল্পের বিপরীতে ম্যাচিং ফান্ড বাবদ চসিকের দেনা রয়েছে ৭১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে বহদ্দারহাট বারইপাড়া হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পে ম্যাচিং ফান্ড বাবদ দেনা ৩১৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। চসিকের আওতায় বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও নালা প্রতিরোধ দেওয়াল, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ/পুনঃ নির্মাণ প্রকল্পে ম্যাচিং ফান্ড ১৭৯ কোটি টাকা, চসিকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং ব্রিজসমূহের উন্নয়নসহ আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সড়ক আলোকায়ন প্রকল্পে ৮৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা, চসিকের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য পরিচ্ছন্ন নিবাস নির্মাণ প্রকল্পের ৪৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন রাস্তা এবং ফুটপাতের উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পে ৪৪ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং চসিকের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও একটি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্পে ম্যাচিং ফান্ড বাবদ দেনার পরিমাণ ৫০ কোটি ১ লাখ টাকা।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত চসিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের শুনানিতে মেয়র আ জ ম নাছিরের বক্তব্যে করপোরেশনের আর্থিক অক্ষমতা ও অসহায়ত্বের চিত্র ফুটে উঠেছে।

ওইদিন স্বাগত বক্তব্যে মেয়র বলেন, সেবা দেওয়ার জন্য সক্ষমতা থাকতে হবে। পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন করার পর আমার সাথে কেউ ছিল না। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারছি না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারব কি না এই চিন্তায় চুল সব পড়ে যাচ্ছে। রাতে ঘুমাতে পারি না। আর কয়দিন পর একটা চুলও থাকবে না। মেয়র হওয়ার আগে মাথাভরা চুল ছিল।

এ সময় ম্যাচিং ফান্ড নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানান মেয়র নাছির।

তবে ঠিকাদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রকল্পে ২০-৩০ শতাংশ অর্থ নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এই অর্থ দেয় না চসিক। এই পরিমাণ অর্থ ছাড়াও ঠিকাদাররা আরো ১০ শতাংশ কম অর্থ ছাড় দিয়ে প্রকল্পের কাজ করে। এর ফলে চসিকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড টেকসই হয় না। রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো নির্মাণে নিম্নমাণের সামগ্রী ব্যবহার করে ঠিকাদাররা।

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, চসিক ম্যাচিং ফান্ড দেয় না এই কথাটা পুরোপুরি ঠিক না। দেয়। তবে আস্তে আস্তে দেয়। পুরো টাকা না নিয়ে তো কোনো ঠিকাদার যাবে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র নাছির চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে ‘ম্যাচিং ফান্ড’ দিতে হয়। ম্যাচিং ফান্ড নিয়ে টেনশন অবশ্যই থাকবে। পরিবার চালাতে যেমন টেনশন, প্রতিষ্ঠান চালাতেও তেমন টেনশন। যতক্ষণ চেয়ারে আছি, ততক্ষণ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান তো আমাকেই করতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। উনার সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। তিনি কয়েকটা প্রকল্প ম্যাচিং ফান্ড ছাড়াই অনুমোদন দিয়েছেন।’

আলী/সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!