অনিশ্চয়তায় দুর্গোৎসব, পেকুয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্ব চরমে

কক্সবাজারের পেকুয়ায় পূজামণ্ডপ ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। দ্বন্দ্ব ও স্নায়ুবিরোধকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর সূত্র ধরে সম্প্রতি পেকুয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রবল হয়েছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পেকুয়া উপজেলা শাখার ব্যানারে একটি গ্রুপ কাজ করছে। অপর একটি গ্রুপ আত্মপ্রকাশ পেয়েছে পেকুয়ায়।

জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ব্যানারে সনাতন ধর্মালম্বীদের বিপুল সদস্য একীভূত হয়েছে। পূজা উদযাপন পরিষদ ও জাতীয় হিন্দু মহাজোট পৃথক অনুষ্ঠান ও আচার রীতি পালন করছে।

সম্প্রতি হিন্দু জাতীয় মহাজোটের অধীনে পেকুয়ায় হিন্দুদের আত্মপ্রকাশকৃত সংগঠনটি ব্যাপকভাবে প্রসারিত। ওই কমিটির কার্যক্রম পেকুয়ায় ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে। অন্যদিকে মহাজোটের জোরালো তৎপরতায় পূজা উদযাপন কমিটি নামক ওই সংগঠনটির কার্যক্রম পেকুয়ায় ম্লান হয়েছে। গতি মন্থর হয়ে ওই সংগঠনটির অবস্থা নিভূ নিভূ। হিন্দু মহাজোট বর্তমানে বেশ কর্মচাঞ্চল্য হয়েছে। হিন্দু মহাজোট পেকুয়ায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে। ওই অনুষ্ঠানে পেকুয়া-চকরিয়ার সাংসদ জাফর আলমসহ ক্ষমতাসীন আ’লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিপুল সনাতনধর্মীর উপস্থিতি ও সমর্থনে ওই অনুষ্ঠানটি প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে। বারবাকিয়া লোকনাথ মন্দির প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান হয়েছে।

এদিকে শারদীয় দুর্গা উৎসবকে ঘিরে বিভক্তি স্পষ্ট হচ্ছে। দু’ধারায় হিন্দুরা মিলিত হচ্ছেন। পূজা উদযাপন পরিষদের মাধ্যমে একটি অংশ পূজাপর্বণ পালন করবেন। অপর একটি ধারা ওই কমিটিকে সরাসরি বয়কট করার ঘোষণা দেয়।

মহাজোটের পেকুয়ার হিন্দুদের মুখ্য নেতা সজল দেবনাথ। ওই সংগঠনের দাবী পূজা উদযাপন কমিটি হিন্দুদের সার্বজনীন সংগঠন নয়। আত্মকেন্দ্রিক পরিধিতে এ সংগঠনটির পেকুয়ায় গুটিকয়েক ব্যক্তির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পূজা উদযাপন পরিষদটির মেয়াদ বহু আগে শেষ হয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারায় বিকশিত না হওয়ায় ওই সংগঠনের কার্যক্রমে স্বৈরাচারী ভাব প্রসন্ন হয়েছে।

হিন্দুদের সংগঠন মহাজোট থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, পূজা উদযাপন কমিটির নাম দিয়ে সুমন বিশ্বাস ও সুকুমার নাথসহ আরও কিছু ব্যক্তি ব্যাপক লুটপাট করছে। তারা সরকারি অর্থ লোপট করছে। পূজাপর্বণ ও হিন্দুদের পুনর্বাসন উন্নয়নের জন্য সরকার যে বরাদ্ধ দেয় নয়’ছয় করে এসব লুটপাটে মেতেছে তারা। পেকুয়ায় পূজা উদযাপনের জন্য মন্দিরের সংখ্যা অধিক দেখিয়ে বিপুল সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছে। সরকার ধর্মীয় উৎসব পালন করতে প্রায় সময় বরাদ্ধ দেয়। কিন্তু তারা ওই অর্থের বিশাল অংক পকেট ভর্তি করছে।

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা পালন করবে পেকুয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়। উৎসব পালন করতে ১৪টি পূজামণ্ডপ তালিকাভুত হয়েছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জানায়, পেকুয়ায় ১৪টি পূজামণ্ডপ হচ্ছে না। ৯টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। ৫টি মণ্ডপ অতিরিক্ত দেখিয়ে সুমন বিশ্বাস সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার পায়তারা করছে। একইভাবে গত বছরেও ৯টি মণ্ডপে পূজা হয়েছিল। ওইসব মণ্ডপে এবারও এ উৎসব হবে।

মহাজোট নেতা সজল দেবনাথ জানান, চলতি অর্থবছরে সরকার পেকুয়ার ৫টি মন্দিরের জন্য অর্থ বরাদ্ধ দেয়। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক পেকুয়ায় এসেছিলেন। তিনি সরকারি বরাদ্ধের অর্থ পূজা কমিটির সভাপতি সুমন বিশ্বাসের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। প্রতিটি মন্দিরের উন্নয়নের জন্য ২২ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়। ওই অর্থ থেকে সুমন বিশ্বাস টাকা আত্মসাৎ করেছে।

সূত্র জানায়, পূজা উদযাপন কমিটির মেয়াদ পেকুয়ায় অনেক আগে শেষ হয়েছে। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ ওই কমিটি রহস্যজনকভাবে পেকুয়ায় ইউনিয়ন কমিটি গঠনের দৌঁড়ঝাপ করছে। কমিটি গঠন নিয়ে হিন্দুদের বড় সংগঠন মহাজোট প্রশ্ন তুলেছেন। ওই সংগঠনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো একক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে পারি না। হিন্দুদের সার্বজনীন উন্নয়ন ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা জন্য গণতান্ত্রিক চর্চা থাকতে হবে। বিকশিত ধারার মাধ্যমে আমরা একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহীমূলক সংগঠন পরিচালন হতে দেখতে চাই।

পূজা উদযাপন পরিষদ পেকুয়ার সভাপতি সুমন বিশ্বাস বলেন, ‌‘এসব কাল্পনিক ও মনগড়া বক্তব্য। আসলে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি। পূজামণ্ডপ কম-বেশি কোনো বিষয় নয়। সরকার পেকুয়ার জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্ধ দেন। মণ্ডপ বেশি ও কমের মধ্যে বরাদ্ধের তারতম্য নেই।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!