অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সহকর্মীকে গলা কেটে খুন করেন ওষুধ কোম্পানির এসআর

কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকা থেকে চট্টগ্রামে জীবিকার সন্ধানে আসেন এরশাদ আলী। এরপর তিনি সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে চাকরি শুরু করেন ‘হেলথ কেয়ার’ নামের একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে। বেশ ভালোই চলছিল তার। ওই কোম্পানিতে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ (এমআর) ছিলেন আশিক বিল্লাহ সুমন। তবে আশিক প্রায় সময় কোম্পানির কাছ থেকে ওষুধ এনে বিভিন্ন ফার্মেসিতে বিক্রি করে দিতেন। তার এসব দুর্নীতির কথা জানতেন এরশাদ। তাই তিনি এসব দুর্নীতির বিষয় কোম্পানিকে জানিয়ে দেবে বলে জানান আশিককে। আর এই কথায় কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য।

ওষুধ কোম্পানির এমআর আশিকের হাতে প্রাণ হারাতে হয় এরশাদকে। ছুরি দিয়ে গলা কেটে তাকে খুন করেন আশিক।

রোববার (১৬ জুলাই) বিকাল ৫টায় চকরিয়া থানার কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে এরশাদ খুনের বিষয়ে এসব তথ্য জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো.জসীম উদ্দিন চৌধুরী।

এরশাদ আলী (৩২) কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার মো.সাফিকুল ইসলামের ছেলে। আর ঘাতক আশিক বিল্লাহ সুমন (৩৫) ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার ছনধরা এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাহমুদ, চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার, চকরিয়া থানার অপারেশন অফিসার (এসআই) রাজিব সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা মো.জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আশিক বিল্লাহ চকরিয়া পৌরশহরের আল-রাজি হাসপাতালের জন্য ১৯ হাজার টাকার ভাউচার করে প্রোডাক্ট নিয়ে আসেন। পরে ওই প্রোডাক্ট চকরিয়ার বদরখালীর দুটি ফার্মেসিতে বিক্রি করেন। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করেন এরশাদ আলী। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাবেন বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আশিক। প্রতিশোধ নিতে তিনি এরশাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে চকরিয়া পৌরশহরের মসজিদ মার্কেটের সামনের দোকান থেকে ৫০ টাকা দিয়ে একটি ধারালো ছুরি কিনে নেন।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে এরশাদ আলীকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠে আসতে বলেন আশিক। এরশাদ ওই জায়গায় এলে তাকে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যান আশিক। এই সময় দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে আশিক পকেট থেকে ছুরি বের করে এরশাদের গলায় চালিয়ে দেন। এরশাদ চিৎকার দিয়ে একটি দূরে গিয়ে পড়ে যান। ওই সময় আশিক দৌড়ে গিয়ে তাকে লাথি মেরে ফেলে আবারও গলায় ছুরি চালান। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান এরশাদ আলী। এরপর আশিক হাসপাতালের দেয়াল টপকে তার বাসায় গিয়ে কাপড় পাল্টান।’

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের মাঠে এক যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন চকরিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে। পরে খুনিকে আটক করতে অভিযানে নামে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে হাসপাতালে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করে পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পর ঘাতক আশিক ঘটনাস্থলে ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল নিতে আসলে তাকে আটক করে পুলিশ। এই সময় তার কাছ থেকে ধারালো ছুরি, নগদ ১৯ হাজার ২০০ টাকা এবং মোবাইল জব্দ করা হয়।’

এএসপি মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘ঘাতক আশিককে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি প্রথমে খুনের কথা অস্বীকার করেন। পুলিশ যখন ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয় তিনি সব স্বীকার করেন।’

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাহমুদ বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ভিকটিমের কোনো আত্মীয়-স্বজন এখনও থানায় আসেননি। তার আত্মীয়-স্বজন আসলে লাশ হস্তান্তর করা হবে। তাদের পক্ষ থেকে লিখিত এজাহার পেলে দ্রুত মামলা এন্ট্রি করা হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!