হুইপ সামশুর রোষানলে পড়ে শেখ কামাল কাপের কার্ড পাননি আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক

আর কয়েক ঘণ্টা পর মাঠে গড়াবে বঙ্গবন্ধু তনয় শেখ কামালের নামে চট্টগ্রাম আবাহনী আয়োজিত ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্ট। যদিও শুরুর মাত্র দু’দিন আগে নাম প্রত্যাহার করে নেয় শেখ কামালের হাত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা আবাহনী। একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এটা বড় একটি ধাক্কা। তবুও এই ধাক্কা সামলে ঠিকই সময়মত টুর্নামেন্ট শুরু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনী।

শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় উপস্থিত থাকবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

শেষ মুহূর্তে অন্যতম আকর্ষণ এবং দেশের অন্যতম সেরা ক্লাব ঢাকা আবাহনীর নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে টুর্নামেন্টের জৌলুশ কিছুটা হলেও কমে গেছে। চট্টগ্রাম আবাহনী চেষ্টা করেছে পরিবর্তিত হিসেবে বড় কোনো ক্লাবকে নিয়ে আসার জন্য। তবুও ভারতের কেরালার গোকুলাম এফসিকে আনার চেষ্টা চলছে। যারা সর্বশেষ মৌসুমে ভারতের আই লিগে নবম হয়েছিল। তবে আজ দুপুর পর্যন্ত তারা নিশ্চিত করেনি। জানা গেছে, এই ক্লাবটিকে আনার বিষয়ে এএফসির অনুমোদন নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে। আন্তর্জাতিক কোনো আসরে খেলার যোগ্য নয় বলে আগেই এই টুর্নামেন্ট থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানকে। অথচ, আগের দুই আসরে খেলেছিল সাদা-কালো জার্সিধারী দলটি। মোহামেডানকে না রাখায় আগেই চট্টগ্রাম আবাহনী আয়োজিত টুর্নামেন্টটি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। এবার ঢাকা আবাহনী নিজেদের নাম প্রত্যাহার করায় টুর্নামেন্টটির আকর্ষণ অনেকাংশেই কমে গেলো।

এসব ঝামেলার মধ্য দিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে আরেকটি খবর। চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব ও সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর বিরাগভাজন হয়ে টুর্নামেন্টের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পাননি চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, আবাহনীর ফুটবল কমিটির সাবেক সভাপতি ও সিজেকেএস নির্বাহী কমিটির সদস্য দিদারুল আলম চৌধুরী।

দিদারুল আলম চৌধুরী এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আমি। ২০০৬ সাল থেকে ৬/৭ বছর ফুটবল কমিটির সভাপতি ছিলাম – যদিও সভাপতি পদ থেকে আমাকে অফিসিয়ালি বাদ দেয়ার কোন চিঠি আমি অদ্যবধি পাইনি। এমনকি আবাহনী ফুটবল কমিটির যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেখানে এখনো আমি সভাপতি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক নম্বর নির্বাহী সদস্য হওয়ার পরও আমাকে কার্ড না দিয়ে তারা হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছেন।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় আয়োজিত যে কোন টুর্নামেন্টে সিজেকেএস নির্বাহী কমিটির নিয়মানুসারে সাংগঠনিক কমিটির অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু আয়োজক কমিটি তিন জনের পাস ইস্যু করবে না বলে জানালেও ৭ অক্টোবরের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকলের ফরম পূরণ করে দাখিল করা হয়। তিন জন হল আসলাম মোরশেদ (জামায়াত ইসলামী নেতা হিসেবে বিবেচিত), মো. তানভীর (মরহুম ইউসুফ গণি চৌধুরীর ছেলে) ও আমি। গতকাল (শুক্রবার) কার্ড নিয়ে আলাপকালে নির্বাহী কমিটির সভায় সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামীম আমাকে জানান আমি ছাড়া ওই দুই জনের কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। আমার বিষয়ে স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক অনুরোধ করলেও সেটি রাখেননি টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য সচিব শামসুল হক চৌধুরী।’

তবুও তিনি টুর্নামেন্টের সফলতা কামনা করে জানান, সাধারণ দর্শক গ্যালারির টিকিট কিনে তিনিসহ প্রাক্তন কর্মকর্তা ও সমর্থকদের নিয়ে খেলা দেখবেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।

বিষয়টি জানতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় সিজেকেএস অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামীমের সাথে। তিনি জানান, ‘টুর্নামেন্টটি চট্টগ্রাম আবাহনীর নিজস্ব।ওনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দিদারুল আলমকে কার্ড দেবে না। টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য সচিব হচ্ছেন চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের মহাসচিব আর সভাপতি হচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এখন ওনারা কাকে কার্ড দিবে সেটি একান্তই তাদের ব্যাপার। ওনারা কালকে আমাদের সাধারণ সম্পাদককে জানান, আমরা আপনাদের একজনকে কার্ড দিতে পারব না। কারণ জিজ্ঞেস করলে ওনারা বলেন এটি আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। দিদার সাহেব নির্বাহী কমিটির কাউকে কার্ড দেয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারে কিনা মিটিংয়ে জানতে চাইলে মেয়র তাঁকে জানান, এটি একটি সরকারি আয়োজন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, অর্থমন্ত্রী যেটির সভাপতি সেখানে আমরা এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারি না।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিনিধি টুর্নামেন্টের সদস্য সচিব হুইপ শামসুল হক চৌধুরীকে বেশ কয়েকবার মোবাইলে কল করলেও ওনি মোবাইল রিসিভ করেননি। পরে এসএমএস পাঠানো হলেও এই বিষয়ে কোন উত্তর দেননি তিনি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!