রাঙ্গুনিয়ায় জমজমাট পশুর হাট, চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি গরুর

আর মাত্র ২দিন পরেই মুসলিমদের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল আযহা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। কোরবানির পশু কেনাকাটায় ক্রেতাদের ভীড় চোখে পড়ার মতো। তবে, সড়কের উপর পশুর হাট না বসানোর জন্য রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানছে ইজারাদার ও অবৈধ বাজার স্থাপনকারীরা।

জানা যায়, উপজেলার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান ফেরীঘাট, কোদালা বাজার, শিলক বৃহচক্রহাট, পদুয়া রাজারহাট খেলার মাঠ, দশ মাইল মুক্তিযোদ্ধা বাজার, সরফভাটা মীরেরখীল, সিকদার পাড়া, বেতাগীর মীর্জাখীল, বালুর চর, রামগতি হাট, পোমরার শান্তিরহাট, মালিরহাট, বুড়ির দোকান, হাজীপাড়া, পৌরসভার রোয়াজারহাট, গোডাউন এলাকা, চৌমুহনী বাজার, পারুয়ার সাহাব্দিনগর, হাজানীহাট, কাটাখালী, হোচনাবাদের শ্চিন্তাপুর লালশাহ বাজার, মোগলেরহাট, লালানগরের আলমশাহ বাজার. দক্ষিণ রাজানগরের ধামাইরহাট, রাজারহাট, ইসলামপুরের গাবতল, রাণীরহাটসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ভাসমান পশুর হাট বসানো হয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, সবকটি পশুর হাট ছিল গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন পশুতে পরিপূর্ণ। হাট ঘুরে, দেখে শুনে নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে গরু কিনতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে ক্রেতারা। ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। তবে দাম বেশি থাকায় মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। হাটগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় সরগরম থাকলেও দাম সাধ্যের বাইরে থাকায় অনেক ক্রেতাই দাম কমার অপেক্ষা করছেন।
বাজারে দাম বেশি থাকায় অনেক বিক্রেতাও আমদানিকৃত গরু বিক্রি না করে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

এদিকে, উপজেলার সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজানগর ইউনিয়নের রাণীরহাট, রোয়াজারহাট, গোডাউন বাজার পুরোদমে জমে উঠেছে। ঈদ যতো কাছে আসছে এসব পশুর হাটগুলোতে ক্রেতাদের ভীড় ও বেড়েই চলছে। গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা ও গরুর বাজার কর্তৃপক্ষ। তবে বাজারগুলোতে জাল টাকা শনাক্তকরণে কোনো যন্ত্র না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

অন্যদিকে, ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি ছোঁয়ায় আরো একধাপ এগিয়ে জমে উঠেছে পশুর হাট। অনেকেই মোবাইল ফোনে ফোর-জি, থ্রি জি নেটওয়ার্কের আওতায় ইমো, ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও কলে প্রবাসে অথবা বাড়িতে থাকা লোকজনকে গরু দেখাচ্ছেন এবং ভিডিও কলে গরু দেখে পছন্দ করছেন কোনটা কিনবেন।
এছাড়াও অনেকেই গরুর ছবি তুলে ফেসবুক, হোয়াটস আপের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের শেয়ার করছেন।

উপজেলার রাণীরহাট বাজারে গরু কিনতে আসা শাহেদ কামাল জানান, দেশীয় গরু কিনতে বাজারে এসেছি, বাজারে দাম খুব বেশি তাই কোরবানির গরু কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। আগামী বাজারে হয়তো দাম আরো কমতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলার রোয়াজারহাটে গরু বিক্রি করতে আসা আবদুল গফুর জানান, অনেকেই আসছেন গরু কিনতে কিন্তু দাম বেশির অভিযোগ করে পশু না কিনে চলে যাচ্ছেন। যার ফলে আমরা আশানুরূপ বিক্রি না করতে পারায় সেগুলো নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। একটি গরু ৮০ হাজার টাকা দাম চাইলেও ক্রেতারা ৫০/৬০ হাজার টাকার বেশি দাম দিতে চাচ্ছে না। তবে ঈদের আগের বাজারগুলোর অবস্থা আরো ভালো হবে বলে আশা করছি।

চট্টগ্রাম উত্তরজেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইউসুফ চৌধুরী বলেন, রাঙ্গুনিয়ার ঐতিহ্যবাহী রাণীরহাট গরুর বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রেতারা পশু নিয়ে আসেন। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর দাম একটু বেশি এবং ভারতীয় গরু বাজারে আসায় দেশীয় গরু বিক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছেন। তাই ক্রেতারাও দাম চড়া হওয়ায় গরু কিনতে পারছেন না। অনেকেই শেষ বাজারের অপেক্ষা করছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জি. সামশুল আলম বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও নির্বিঘ্নে ক্রেতা বিক্রেতারা পশু ক্রয় বিক্রয় করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহসান ভূঁইয়া বলেন, উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়েছে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!