ব্র্যাথওয়েটের অবিশ্বাস্য লড়াই, গেইলের স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ের পরও জয়ের দেখা পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালের আরও কাছে চলে গেছে নিউজিল্যান্ড। ওল্ড ট্রাফোর্ডে উইলিয়ামসনের লড়াকু ১৪৮ রানের কাছে গেইলের ৮৭ ও ব্র্যাথওয়েটের ১০১ পরাজয়ের পাতাতেই থাকল।
একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে বাধ্য করেছে। ৬ ম্যাচে ৫ জয়ে আবারও শীর্ষে কিউইরা। আর সমান ম্যাচে মাত্র এক জয় ক্যারিবীয়দের। কার্যত সেমির আশা শেষই উইন্ডিজের।
শনিবার দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে শূন্যরানে দুই উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলরের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায়।নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে ২৯১ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ গড়ে নিউজিল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে ৪৭তম ওভারের শেষে গুটিয়ে যাওয়ার সময় ২৮৬ পর্যন্ত যেতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বল হাতে চমক দেখিয়েছিলেন শেলডন কটরেল ও কার্লোস ব্রাফেট। তবু নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহটা গিয়ে পৌঁছায় ২৯১ রানে। যা তাড়া করার গুরুদায়িত্ব ছিলো ক্রিস গেইল, শিমরন হেটমায়ারদের ওপর। দুজনই খেলেছেন ভালো ইনিংস।
শেষদিকে ঝড়ো সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন কার্লোস ব্রাফেটও। কিন্তু জয়টা পাওয়া হয়নি তাদের। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে জয় ঠিক তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ফলে ছয় ম্যাচ শেষেও অপরাজিত রইলো কেন উইলিয়ামসনের দল, একই সঙ্গে পুনরুদ্ধার করেছে নিজেদের শীর্ষস্থান।
ক্রিস গেইল ও শিমরন হেটমায়ারের ফিফটির সঙ্গে কার্লোস ব্রাফেটের ঝড়ো সেঞ্চুরির পরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয়েছে ২৮৬ রানে। ফলে পাঁচ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে নিউজিল্যান্ড। এ পরাজয়ের পর ৬ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সাত নম্বরেই রইলো ক্যারিবীয়রা।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ডানহাতি ওপেনার শাই হোপ (৩ বলে ১) ও নিকোলাস পুরান (৭ বলে ১) ব্যর্থ হলে মাত্র ২০ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। তবে তৃতীয় উইকেটে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন ক্রিস গেইল ও শিমরন হেটমায়ার।
দুই বাঁহাতি তরুণ ও অভিজ্ঞের জুটিতে আসে ১২২ রান। যেখানে ৪৫ বলে ৮ চার ও ১ ছয়ের মারে ৫৪ রান করেন হেটমায়ার। দলীয় ১৪২ রানের মাথায় এ তরুণের বিদায়ের পরই ভাঙন আসে ক্যারিবীয়দের ইনিংসে। মাত্র ২২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে তারা।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও তা করতে পারেননি গেইল। আউট হন ৮৪ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কার মারে ৮৭ রানের ইনিংস খেলে। এছাড়া অধিনায়ক জেসন হোল্ডার (১ বলে ০), অ্যাশলে নার্স (৩ বলে ১) ও এভিন লুইস (৩ বলে ০) ব্যর্থ হলে পরাজয়ের খুব কাছে চলে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
কিন্তু এতো সহজেই পরাজয় মেনে নিতে রাজি ছিলেন না কার্লোস ব্রাফেট। নিচের ব্যাটসম্যানদের দিয়ে তিনি করেন পাল্টা আক্রমণ। অষ্টম উইকেটে কেমার রোচকে (৩১ বলে ১৪) নিয়ে গড়েন ৪৭ রানের জুটি, নবম উইকেট কটরেলের (২৬ বলে ১৫) সঙ্গে যোগ করেন ৩৪ রান।
দলীয় ২৪৫ রানের মাথায় কটরেল ফিরে গেলে পুরোপুরি একা বনে যান ব্রাফেট। তবু শেষ ব্যাটসম্যান ওশানে থমাসকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান তিনি। একপর্যায়ে ৪ ওভারে বাকি থাকে ৪০ রান। লকি ফার্গুসনের করা সে ওভারে ব্রাফেট নেন ৭ রান।
শেষের ৩ ওভারে ৩৩ রানের সমীকরণে বোলিংয়ে আসেন ম্যাট হেনরি। তার ওভারের প্রথম বলে ২ নেন ব্রাফেট। পরের চার বলে যথাক্রমে হাঁকান ৬, ৬, ৬ ও ৪! শেষ বলে আরও ১ রান নিয়ে সে ওভার থেকে ২৫ রান নিয়ে নেন ব্রাফেট।
ফলে সমীকরণ নেমে আসে ১২ বলে ৮ রানে। এমতাবস্থায় বল হাতে তুলে নেন জিমি নিশাম। ৪৯তম ওভারের প্রথম তিন বল ডট খেললেও, চতুর্থ বলে ২ রান নিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূরণ করেন ব্রাফেট।
তখন তাদের জয়ের জন্য বাকি ৮ বলে ৬ রান। ডট যায় পঞ্চম বলটিও। শেষ বলে ১ রান নিয়ে পরের ওভারে খেলা নিয়ে যাওয়ার বদলে, ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করেন ব্রাফেট। কিন্তু লং অন বাউন্ডারিতে ট্রেন্ট বোল্টের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হয়ে আউট হয়ে যান তিনি।
ফলে মাত্র ৫ রানে পরাজিত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্রাফেট থামেন ৮২ বলে ৯ চার ও ৫ ছয়ের মারে ১০১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে বোল্ট ৪টি ও লকি নেন ৩টি উইকেট।
এর আগে ইনিংসের প্রথম বলে সাজঘরে ডানহাতি ওপেনার মার্টিন গাপটিল, পঞ্চম বলে বোল্ড হয়ে একই পথে অন্য ওপেনার কলিন মুনরোও- ইনিংসের শুরুতেই এমন ধাক্কার পর নিউজিল্যান্ডের দলীয় সংগ্রহকে ঘিরে ছিলো নানান অনিশ্চয়তা।
ক্যারিবীয় বোলিংয়ের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি-না কিউইরা, তা নিয়েও ছিল রাজ্যের সংশয়। তবে সব সংশয় উড়িয়ে দিয়েছেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন নিজেই। খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস, দলকে পৌঁছে দিয়েছেন লড়াই করার মতো সংগ্রহে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগের ম্যাচে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে দলকে নিয়ে গেছিলেন জয়ের বন্দরে। শনিবার আউট হয়েছেন ঠিক, তবে তার আগে ক্যারিয়ার সেরা ১৪৮ রানের ইনিংস খেলে নিজ দলকে ২৯১ রানের সংগ্রহ এনে দিয়েছেন উইলিয়ামসন।
ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ক্যারিবীয়দের আমন্ত্রণে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। শেলডন কটরেলের করা প্রথম ওভারের প্রথম বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন গাপটিল, পঞ্চম বলে সোজা বোল্ড হয়ে যান মুনরো। কেউ রাখেন খাতা খুলতে পারেননি।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে পরিস্থিতি সামাল দেন দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান রস টেলর ও কেন উইলিয়ামসন। দুজন মিলে গড়েন ১৬০ রানের জুটি। দলকে পাইয়ে দেন বড় সংগ্রহের ভিত। দলীয় ১৬৭ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৬৯ রানে আউট হন টেলর।
তবে অন্যপ্রান্ত ধরে রাখেন কিউই অধিনায়ক। ক্যারিয়ারের ৩৯তম অর্ধশতকটিকে রূপ দেন ১৩তম সেঞ্চুরিতে। ছাড়িয়ে যান নিজের আগের সর্বোচ্চ ১৪৫ রানের ইনিংসকে। তিনি আউট হন ৪৭তম ওভারে ২৫১ রানের মাথায়। যার মধ্যে ১৪৮ রানই তার নিজের করা। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটিকে ১৪ চার ও ১ ছয়ের মারে সাজান উইলিয়ামসন।
শেষদিকে জিমি নিশাম ২৩ বলে ২৮, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ৬ বলে ১৬ ও মিচেল স্যান্টনার ৫ বলে ১০ রান করলে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রানে থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে একাই ৪ উইকেট নেন কটরেল। এছাড়া কার্লোস ব্রাফেটের শিকার ২টি উইকেট।