বাড়ি বানানোর খরচ বাড়ছে হু হু করে, নির্মাণসামগ্রীর দাম আকাশছোঁয়া

তিন মাসে রডের দামই বাড়ল ৩০ হাজার টাকা

রড-সিমেন্টই শুধু নয়, ইট-পাথর-বিটুমিনসহ সব ধরণের নির্মাণসামগ্রীর দাম এখন আকাশ ছুঁতে চলেছে। এ কারণে সরকারি উন্নয়ন কাজ শেষ করতে ঠিকাদারের যেমন পকেট কাটছে, পাশাপাশি বাড়ি বানাতে ব্যক্তি পর্যায়েও বড় ধাক্কা খেতে হচ্ছে।

জানা গেছে, গত তিন মাসের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার টাকা বেড়ে গেছে রডের দাম। বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে সিমেন্ট। প্রতি হাজার ইটের দাম বেড়েছে দেড় হাজার টাকা। দুই হাজার টাকা বেড়েছে প্রতি টন পাথরের দাম। দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেড়েছে বিটুমিনের মূল্য।

এক সপ্তাহ আগেও দেশের শীর্ষস্থানীয় রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম ও কেএসআরএমের ভালমানের (৬০ গ্রেড) রড বিক্রি হচ্ছিল ৭০ হাজার টাকার নিচে। দিন দিন সেটা বাড়তে বাড়তে এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৮ হাজার ৫০০ টাকায়। আবার খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৯০ হাজার টাকায়ও।

জানা গেছে, যদিও গত নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে রডের দাম বাড়ার প্রবণতা। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিমাসেই বেড়েছে নির্মাণের প্রধান উপকরণ এই রডের মুল্য। জানুয়ারি থেকে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অন্যান্য সামগ্রীর দামও।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রডের অন্যতম কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের বাজারেও রডের দাম বাড়ছে। সেই সাথে শুষ্ক মৌসুমে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হওয়াও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।

অপরদিকে সিমেন্টের কাঁচামালের দামও বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। ফলে সিমেন্টের দামও বাড়ছে। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে ১০০ বেড়েছে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্টের দাম।

গত নভেম্বর মাসে ওমান থেকে দেশে এসে বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন ফটিকছড়ির পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের আবুল কাসেম। নভেম্বরে তিনি রড কিনেছেন প্রতি টন ৬৫ হাজার টাকায়, প্রতি হাজার ইট কিনেছেন ৬ হাজার ৫০০ টাকায় আর সিমেন্ট কিনেছেন বস্তাপ্রতি ৪২০ টাকায়। বর্তমানে সেই একই রড তাকে কিনতে হচ্ছে ৯০ হাজার টাকায়। প্রতি হাজার ইট কিনতে হচ্ছে ৮ হাজারে। সিমেন্টও কিনতে হচ্ছে বস্তাপ্রতি ৫২০ টাকায়।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এভাবে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়লে কিভাবে বাড়িঘর তৈরি করবো? প্রবাসীদের টাকা চলে যাচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদনকারী কোম্পানির পকেটে।

এদিকে নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের এলজিইডি ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতি। সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ইট সিমেন্ট ও রডের দাম বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে নির্মাণসামগ্রীর দামও। সেই সঙ্গে শ্রমিকের দৈনিক মজুরিও বেড়েছে। কাজ তুলতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বিএসআরএম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) তপন সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধির কারণে রডের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আমাদের দেশে রড যে দামে বিক্রি হচ্ছে, সেটি পাশ্ববর্তী ভারতের বাজারমূল্য থেকে ১০ হাজার টাকা কম।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রডের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। রডের কাঁঁচামাল বাজার তুরস্ককেন্দ্রিক। যা তুরস্ক সংগ্রহ করে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপ থেকে। কিন্তু বর্তমানে যুদ্ধের কারণে তুরস্ক স্ক্র্যাপ দিতে পারছে না। ফলে আমাদের দেশে এর প্রভাব পড়েছে।

তিনি জানান, বিএসআরএম ডিলার থেকে সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি টন রড কিনতে পারবেন যে কোন ক্রেতা। এর থেকে কোন ডিলার বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই।

কেএসআরএম গ্রুপের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) জসিম উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের বৃদ্ধিই রডের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!