ফুলকলির মেয়াদোত্তীর্ণ দই—হলুদ মরিচের গুঁড়ায় মেশানো হচ্ছে ধানের কুড়া, কাপড়ের রং

হলুদ ও মরিচের গুড়োতে মেশানো হচ্ছে ধানের কুড়া, কাপড়ের রং আর কয়লার গুড়া। আর সেসব মসলা ‘খাঁটি’ জেনে দেদারসে কিনে ঠকছেন ক্রেতারা। এ চিত্র চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এলাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি মসলা মিল জনি মসলা মিলের।

হলুদ, মরিচ কিনে তা গুড়ো করে পাইকারিভাবে নগরীর বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করা হত এ দোকান থেকে। অভিযোগ পেয়ে মিলটিতে অভিযান চালাতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে তাঁরা দেখেন, মিলের লোকজন হলুদ ও মরিচের গুড়োতে মেশাচ্ছেন ধানের কুড়া, কাপড়ের রং আর কয়লার গুড়া। হাতেনাতে ধরে তৎক্ষণাৎ মিলমালিককে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও ৪০ কেজি ভেজাল মসলা ধ্বংস করেন অভিযান টিম।

নিউমার্কেট মোড়ে ফুলকলি সুইটসের পরিবেশক মেসার্স ফরিদুল আলম। তিনি বিক্রির জন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখেন মেয়াদোত্তীর্ণ দই। অভিযানে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন, পাশাপাশি নষ্ট করা হয় মেয়াদোত্তীর্ণ দই।

শুধু খাতুনগহ্জের জনি মসলা মিল বা ফুলকলির পরিবেশক নয়, এমন ভেজালের জয়জয়কার চলছে চট্টগ্রামের সর্বত্র। জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করলেও কমছে না ভেজাল ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য।

বুধবার (১৮ আগস্ট) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় খাতুনগঞ্জ ছাড়াও অভিযান পরিচালনা করেন মহিমদাশ লেইন, কোতোয়ালি থানার মোড়, নিউমার্কেট মোড় এলাকায়। সকাল ১১টা থেকে পরিচালিত অভিযানে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর বিভিন্ন ধারায় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ, সহকারী পরিচালক (মেট্রো) পাপীয়া সুলতানা লীজা ও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। অভিযানে সহায়তা করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।

মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, মসলা মিল ছাড়াও কোতোয়ালী থানা মোড়ের ইউনাইটেড মেডিসিন সেন্টারকে কাটা ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ করায় ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নিউমার্কেট মোড়ের ফুলকলি সুইটসের পরিবেশক মেসার্স ফরিদুল আলম কোম্পানিকে মেয়াদোত্তীর্ণ দই বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করে রাখায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া মহিম দাশ সড়কের আল ফারুক স্টোরকে উৎপাদন-মেয়াদ উল্লেখ বিহীন মোড়কজাত দুধ, বৈধ আমদানিকারকবিহীন বিদেশি পণ্য সংরক্ষণ করায় ৭ হাজার টাকা জরিমানা ও সতর্ক করা হয়।

তিনি আরও বলেন, মসলা মিলে হলুদ, মরিচের সাথে যেভাবে ধানের কুড়া, কাপড়ের রং আর কয়লার গুড়া মেশানো হচ্ছিল তা দেখে আমাদের অভিযান টিমের চোখ কপালে উঠে গেছে। খাতুনগঞ্জের মত এমন ঐতিহ্যবাহী পাইকারী বাজার এলাকার মধ্যে এরকম অন্যায় কাজ করে আসছিল দোকান মালিকরা।

এটি দেখে অনান্য দোকান মালিকরাও শিক্ষা গ্রহণ করে ভেজাল মেশানো থেকে বিরত থাকবে বলে মনে করেন তিনি। নিয়মিত এ অভিযান চলবে বলেও জানান হাসানুজ্জামান।

আইএমই/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!