করোনায় স্থবির হয়ে গেছে সবকিছুই। বেকার হয়ে পড়েছে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার লোকজন। বিশেষ করে প্রায় ৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পনির্ভর সকল হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, পর্যটন কেন্দ্র। আর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির শিকার।
এখানকার কিটকট (সৈকতের ছাতা) ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফার ও নানা প্রকারের খাবার বিক্রেতারাও বেকার হয়ে পড়েছেন। ফলে চরম দুর্দিন চলছে পর্যটকনির্ভর শতাধিক ব্যবসায়ী, ২ শতাধিক কিটকট শ্রমিক ও ৫ শতাধিক ফটোগ্রাফারের।
তাদের মতে, করোনা সংকটের ৪ মাস পার হলেও কেউ তাদের খবর নেয়নি। তবে কিছুদিন আগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে করোনায় বিপর্যস্ত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ৪৩৩ জন দুঃস্থ ব্যবসায়ীর মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
পর্যটকদের ঘিরে যে জমজমাট ‘কিটকট’ ব্যবসা চলতো, দীর্ঘদিন ধরে পর্যটক না আসায় সেখানে এখন বিরাজ করছে হাহাকার।
সরেজমিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে। শুধু তাই নয় দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকার কারণে নষ্ট হতে চলেছে কিটকটগুলো (ছাতা-চেয়ার)।
৩৪ বছর ধরে সৈকতে কিটকট দেখাশোনা করে আসছিলেন বাহারছড়ার আবুল কাশেম। তিনি জানান, এই কিটকটকে ঘিরেই ছিল তার আয়ের প্রধান উৎস। বর্তমানে করোনা সংকটের কারণে পর্যটক না আসায় আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তার।
অনেকটা একই সুরে বললেন সৈকতের কিটকট ব্যবসায়ী কলাতলী বড়ছড়ার নাজমুল হক। তিনি জানান, যখন পর্যটক ভরপুর ছিল তখন প্রতিদিন কিটকট দেখাশোনায় তার দৈনিক আয় ছিল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে করোনার কারণে তার জীবন চাকা যেন থেমে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই বিকল্প কিছু চিন্তা করছেন তিনি।
কক্সবাজার কিটকট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, সমুদ্র সৈকতে প্রায় ১২০০ কিটকট চেয়ারের অনুমোদন আছে। এর মধ্যে ১ হাজার চেয়ার নিয়মিত বসানো হয়। দীর্ঘ সময় ধরে পর্যটক না আসায় তাদের ব্যবসা বন্ধ। ফলে চেয়ার ও ছাতাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধু পর্যটননির্ভর কিটকট ব্যবসায়ী কিংবা শ্রমিকেরা নয়, করোনার কারণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এখানকার ফটোগ্রাফাররাও।
তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে যেমন বন্ধ এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো, তেমনি বন্ধ ৫ শতাধিক ফটোগ্রাফারের আয়। এসব পেশার লোকজনের চরম আর্থিক সংকটে দিন যাচ্ছে। তবে কিছু কিছু ফটোগ্রাফার সরকার সহায়তা পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
সৈকতে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে পর্যটক ও স্থানীয়দের ছবি তুলে সংসার চালাচ্ছেন কলাতলীর মো. রাসেল। তিনি জানান, মা-বাবাসহ ৪ ভাই ও ২ বোনকে নিয়ে তার সংসার। তার বাবা চাষাবাদ করে কোনমতে সংসার চালান। সৈকতে পর্যটকদের ছবি তুলে যা আয় হয় সেই টাকা দিয়ে সংসারে সহযোগিতা করে। কিন্তু করোনার এই সংকটে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে তাদের।
সিপি