ধারের টাকা না পেয়ে কিশোরীকে দেড় মাস আটকে রেখে চারজন মিলে ধর্ষণ

টাকা ধার নিয়েছিলেন বাবা। সেই টাকা দিতে না পারায় তুলে নিয়ে যান কিশোরী কন্যাটিকে। এরপর টানা দেড় মাস ধরে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে যায় চারজন মিলে।

কক্সবাজারের এই ঘটনায় দেড় মাস পর ওই কিশোরীকে উদ্ধার করেছে চট্টগ্রামের র‍্যাব-৭। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) মূল অভিযুক্তসহ তিনজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।

জানা গেছে, কক্সবাজারে এক টমটমচালক শাহাব উদ্দিনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন এক কিশোরীর বাবা। সেই টাকা দিতে না পারায় কিশোরীকে তুলে নিয়ে দেড় মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন সেই টমটমচালক ও তার তিন সহযোগী।

ঘটনা জেনে র‍্যাব-৭-এর সদস্যরা দেড় মাস পর সেই কিশোরীকে উদ্ধার করার পর গ্রেপ্তার করেছে টমটমচালক শাহাব উদ্দিনসহ তার তিন সহযোগীকে। তাদের কক্সবাজার মডেল থানায় হস্তান্তর করার পর শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া চারজন হলেন সদর উপজেলার খরুলিয়া চেয়ারম্যানপাড়ার মো. শাহাব উদ্দিন (২৮), তার সহযোগী খুরুসকুল হাটখোলাপাড়ার মো. নুরুল আলম (৩৮), পেঁচারঘোনার লোকমান হাকিম (৩৪) ও পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আরমান হোসেন (২৭)।

কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনীর-উল-গীয়াস জানিয়েছেন, কিশোরীকে উদ্ধারের পর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কিশোরীর মা জানিয়েছেন, তার স্বামী টমটম চালান। খরুলিয়া চেয়ারম্যান পাড়ার শাহাব উদ্দিনের টমটম চালাতে গিয়ে তার সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক হয়। সেই সুবাদে শাহাব উদ্দিন তাদের বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। এর মধ্যে তার স্বামীর টাকার প্রয়োজন পড়ায় তিনি টমটমচালক শাহাব উদ্দিনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ধার নেন। টানাপোড়েনের সংসারে তার স্বামী সেই টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। এই সুযোগে শাহাব উদ্দিন ও তার লোকজন মিলে তাদের কিশোরী মেয়েকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। টাকা ফেরত না দিলে মেয়েকে আর ফেরত দেবেন না বলে শাহাব উদ্দিন জানিয়ে দেন।

এই ঘটনার পর তারা মেয়েকে উদ্ধারের জন্য খরুলিয়ার ইউপি সদস্য আবদুর রশিদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেন। তাতেও মেয়েকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মেয়েকে উদ্ধারের জন্য সরকারি সহায়তা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে আকুতি জানান মা। ৯৯৯ থেকে বিষয়টি কক্সবাজার মডেল থানাকে অবগত করা হলে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনসুরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ কিশোরীকে উদ্ধারের জন্য গত ১১ অক্টোবর খরুলিয়া চেয়ারম্যানপাড়ায় টমটমচালক শাহাব উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু অভিযানের খবর আগে থেকে জেনে যাওয়ায় শাহাব উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন ওই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

র‌্যাব-৭ জানিয়েছে, কিছুদিন আগে ওই কিশোরীর মা র‌্যাব-৭-এর কাছে অভিযোগ করেন, গত ১ সেপ্টেম্বর শাহাব উদ্দিন ও তার সহযোগীরা মিলে তার ছোট মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে প্রায় দেড় মাস ধরে অজানা স্থানে আটকে রেখে ধর্ষণ করছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭ ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ছায়া তদন্ত শুরু করে।

তবে আসামিরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করায় তাদের আটক করার কাজটি ছিল কষ্টসাধ্য। এর একপর্যায়ে র‌্যাব-৭ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, ধর্ষক ও তার সহযোগীরা কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন কস্তুরা ঘাট এলাকায় অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় র‌্যাব-৭-এর একটি দল টানা ৩৬ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।

এদিকে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে র‌্যাব সদস্যরা প্রধান আসামি শাহাব উদ্দিনকে আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর তিন আসামি আরমান হোসেন, মো. নুরুল আলম ও লোকমান হাকিমকে খরুসকুল থেকে আটক করা হয়।

পরে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শাহাব উদ্দিন অপর তিন আসামিকে নিয়ে ভিকটিমকে অপহরণ ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন।

খরুলিয়ার ইউপি সদস্য আবদুর রশিদ জানান, টমটম চালক শাহাব উদ্দিন এর আগেও নারী সংক্রান্ত ঘটনা ঘটিয়েছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!