সাতকানিয়ায় পাহাড়ের পাশে ৭ ইটভাটা, মাত্র দুটিকে জরিমানা

নীরব প্রশাসন

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও বাঁশখালী সীমান্তের লটমনি ও চূড়ামনি এলাকার পাহাড় ঘেঁষে স্থাপিত ৭ ইটভাটার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটাসহ ব্যাপক অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগের খতিয়ান দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। সম্প্রতি এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে কর্মকর্তাদের। সর্বশেষ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এসব এলাকায় পাহাড় কাটার দায়ে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম মানিকের দুটি ইটভাটাকে ৮ লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এ দুটি ইটভাটাকে দৃশ্যমান জরিমানা করলেও পাহাড় কাটার দায়ে অভিযুক্ত আরও ৫টি ইটভাটার দিকে ফিরেও থাকায় নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে জরিমানা না করায় পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে ওআর নিজাম চৌধুরীর ঝন্টুর মালিকানাধীন খাজা ব্রিকস, আব্দুল করিমের বাদশা মিয়া ব্রিকস, হাসান লিটনের বিসমিল্লাহ ব্রিকস, কাজল বাবুর মা ব্রিকস ও আবুল বশরের আরএমবি ব্রিক।

অভিযোগ রয়েছে, এসব ইটভাটা প্রভাবশালীদের শেল্টারে থাকায় ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নিচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি ঝন্টুর মালিকানাধীন বিবিসি ব্রিকস ও মো. করিমের মালিকানাধীন কেএমবি (বাদশা) ব্রিকসের চুল্লি ও কাঁচা ইটে পানি ছিটিয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও দমকল বাহিনী। নামে মাত্র দুটি ইটভাটায় সামান্য পরিমাণ পানি ছিটিয়ে তারা দাবী করছেন ইটভাগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা এমন দাবী করলেও বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, ইটভাটায় দমকল বাহিনীর সামান্য পানি হাতির গায়ে নুনের ছিটা মাত্র। অল্প পানি দিলে কখনও ভাটার জ্বলন্ত আগুন নিভে না। তবে তারা দুটি ভাটায় পানি ছিটিয়ে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। একই জায়গায় আরও ৫টি ভাটা থাকলেও তারা সেগুলোতে অভিযান চালায় নি। অবশ্য অভিযান পরিচালনাকারী সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা বলেছেন সময়ের কারণে ইটভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় নি।

স্থানীয়রা জানান, ইটভাটাগুলো সরকারি জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ইটভাটা সরকারি পাহাড়ের মাটি কাটছে এবং সরকারি গাছকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। যেটা সাতকানিয়ায় ‘ওপেন সিক্রেট’। তাই এসব ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এদিকে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়া ছনখোলার চূড়ামনি এলাকায় পাহাড় কাটার সত্যতা অভিযানে যায় দুদকের চট্টগ্রাম অঞ্চল। তারা সেখানে গিয়ে পাহাড় কাটার বিষয়ে সত্যতা পান।

এ বিষয়ে দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন বলেন, ‘সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে ইটভাটা পরিচালনা করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না এই জনপদে। শীঘ্রই যেসব ইটভাটার কাগজপত্র ঠিক নেই এবং পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছেন সেগুলো গুড়িয়ে দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, সাতকানিয়া উপজেলায় প্রায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে অনুমোদন নেই ৬১টির। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন, বন কর্মকর্তা ও বিট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ইটভাটাগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া কৃষি জমির মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!