শীতের রাতে পানিতে ভেসে যাচ্ছে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা, বন বিভাগের কাণ্ড

হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ, শতাধিক কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বাঁধ দিয়ে তৈরি করা একটি কৃত্রিম হ্রদ হঠাৎ করে কেটে দেওয়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই তীব্র শীতের রাতে এমন আকস্মিক দুর্যোগ নেমে এসে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া থেকে সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা প্রায় পাঁচ ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বাঁধটি কাটার আগে বন বিভাগ ন্যূনতম সতর্কতাও জারি করেনি। এমনকি এ ব্যাপারে আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদেরও কিছু জানায়নি বন বিভাগ।

পানির প্রচণ্ড তোড়ে সোনাকানিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র মির্জাখীল বাংলাবাজার পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়।
পানির প্রচণ্ড তোড়ে সোনাকানিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র মির্জাখীল বাংলাবাজার পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়।

এদিকে পানির প্রচণ্ড তোড়ে অন্তত দুটি স্লুইসগেট ভেঙে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় শতাধিক মানুষের কাঁচা ঘর ভেঙে যাওয়ার খবর মিলেছে। এমন আকস্মিক পানির স্রোতে বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেসে গেছে সদ্য লাগানো ধানের চারা।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া বনের প্রায় আড়াই হাজার একর বনভূমিতে গড়ে ওঠা ওই কৃত্রিম হ্রদের বাঁধ কাটার কাজ শুরু করে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক। এতে নেতৃত্ব দেন বন বিভাগের চট্টগ্রাম সদরের সহকারী বন সংরক্ষক মারুফ হোসেন এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেনসহ বন বিভাগের অর্ধশত কর্মী।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে সোনাকানিয়া ছড়ায় বাঁধ দিয়ে ওই ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ওই বাঁধ তৈরি করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁধ কাটার পর পর শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলেই ঢলের মতো ছুটে আসা পানিতে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়। সোনাকানিয়া খালের একাধিক জায়গায় পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। পানির এমন ব্যাপকতায় শুকনো মৌসুমে ডলু খালও পানিতে ভরাট হয়ে গেছে।

এলাকাবাসী জানায়, সন্ধ্যার দিকে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়ার পর পশ্চিমের পাহাড় থেকে পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়ার সাইরতলী, তাঁতীপাড়া ডুবে যায়। এরপর একে একে কুতুবপাড়া, মঙ্গলচাঁদ পাড়া পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। এই পানি একসময় এসে পৌঁছায় সোনাকানিয়ার মির্জাখীল গ্রামে। ওই এলাকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র মির্জাখীল বাংলাবাজার পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়। সবগুলো দোকানের নিচতলা ডুবে গেছে। এতে দোকানের প্রচুর মালামাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ব্যবসায়ীদের এতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাবাজারের ভাসমান দোকানিদের পণ্যসামগ্রী মুহূর্তেই ভেসে যায় পানির তোড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পানির প্রচণ্ড তোড়ে কালামিয়া পাড়া স্লুইসগেট ও মির্জাখীল দরবার স্লুইসগেট ভেঙে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। কালামিয়া পাড়া, আচারতলী, সাইরতলী, মঙ্গলচাঁদ পাড়া, কুতুবপাড়া এলাকায় বহু মানুষের কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে মুহূর্তেই।

জানা গেছে, সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের সাইরতলী পাড়ার মন্টু, আবদুল আজিজ, ইউসুফ আলী, শমশু, মাহবুব, অছি মিয়ার বাড়ির আহমদ, মিন্টু, আব্দুল কাদের, আবদুল হামিদ, জহির মিয়া, লেদা মিয়া, ইসমাইলসহ বহু বাসিন্দার কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে যায়।

জানা গেছে, বাঁধ কাটার পর ছুটে আসা পানিতে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নতুন লাগানো ধানের চারা পানিতে পুরোপুরি ভেসে গেছে। বিশেষ করে আলু, মরিচ, শসা ক্ষেতসহ শীতকালীন সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন পুকুর চাষ করা মাছও পানির প্রবল তোড়ে ভেসে গেছে।

এমন আকস্মিক পানির তোড়ে গবাদিপশু নিয়েও অনেকেই ভোগান্তিতে পড়ে যান। কেউ কেউ শুকনো জায়গায় পশুসহ ঠাঁই নিয়েছেন। ইতিমধ্যে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে যাওয়ার খবরও মিলেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মির্জাখীল বাংলাবাজার সংলগ্ন ব্রিকফিল্ডে কাঁচা ইটসহ সদ্য আগুন দেওয়া ইটভাটারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!