সিটি কর্পোরেশনে অভিযোগ বেশি রাজস্ব ও প্রকৌশল বিভাগের বিরুদ্ধে

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সেবার মান বৃদ্ধি, অহরহ অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ অক্টোবর গণশুনানি আয়োজন করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের এই আয়োজনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাড়ার বিভিন্ন দপ্তরে চলছে আলোচনা।

গণশুনানি নিয়ে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক কাজ করছে— সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।
টিআইবি বলছে, দুদকের এই গণশুনানি আয়োজনকে কিছু লোক সাধুবাদ জানালেও অধিকাংশ মানুষ বলছেন এটির পরবর্তীতে কোন ফলোআপ ও কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় পণ্ডশ্রম বলে মনে হয়। তবে এই প্রোগ্রামের কার্যকরি পদক্ষেপ না থাকায় গণশুনানি করা একধরনের লোক দেখানোর কাজ বা আইওয়াশ বলে অভিহিত করেন জনগণ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মোট ৭টি বিভাগের পরিকল্পনা শাখা ও আদালত শাখাসহ কয়েকটি শাখাও রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে সংস্থাপন বিভাগ, হিসাব বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ, পরিচ্ছন্ন বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগ।

এদিকে গণশুনানির এই আয়োজনকে ঘিরে দুদকের কাছে অধিকাংশ অভিযোগ রয়েছে চসিকের রাজস্ব ও প্রকৌশল বিভাগের। তবে বাকি বিভাগেরও কমবেশি অভিযোগ জমা রয়েছে। গতকাল (৯-১০ অক্টোবর) পর্যন্ত পথচারী ও সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে প্রায় শতাধিক অভিযোগ সংগ্রহ করেছে দুদক।

দুদক সূত্রে জানা যায়, সরকারি ও আধা সরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বিষয়ে নাগরিকের নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উদ্যোগে ১০-১২টি গণশুনানি করা হয়। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিদ্যুৎ বিভাগসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের গণশুনানির করা হয়।

এদিকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের নজরদারিতে রয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বেশকয়েকজন প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এদের মধ্যে প্রকৌশল বিভাগের দুই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ও প্রকৌশলী সুদীপ বসাকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে।

চসিক সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক চাকরির প্রলোভনে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন রাজস্ব বিভাগের জানে আলম নামের এক কর্মকর্তা সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। একই অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা বিভাগের মোজাম্মেল হক নামের এক শিক্ষকের বিষয়ে তদন্ত চলছে।

গত তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে.কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নিয়ে দুদকের গণশুনানি করা এটা নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগগুলো প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করবে এবং মানুষ সতর্ক হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার আমলে চসিকের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমি যোগদানের পর থেকে সেখানে অনেকগুলো সিস্টেম চালু ছিল না। অনেকটা সিস্টেমের ওপর দাঁড় করাতে চেয়েছিলাম। যেটাতে আপনা-আপনি দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যায়। ফাইলগুলোতে ঠিকাদারের ছবি থেকে শুরু করে ও টেন্ডারের ডকুমেন্টারি পর্যন্ত যত ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দরকার সবই যাতে সঠিকভাবে দেওয়া হয়— নিয়ম চালু করেছিলাম। কিন্তু ওই সময় বিষয়টি ভালভাবে নিতে না পারার কারণে অনেকেই আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে আবার তারাই এই সিস্টেমকে সাধুবাদ জানায়। এর কারণে ফাইলের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আসছে ও ভবিষ্যতে নিরীক্ষা করতে সুবিধা হবে।’

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও টিআইবির চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘দুদক এর আগে সরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে গণশুনানি করে। প্রথমে অভিযোগের বিষয় আমলে নিলেও পরবর্তীতে এগুলো নিয়ে কোন ফলোআপ হয় না। দেশের সরকারি ও আধা-সরকারি এমন কোন বিভাগ নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। তবে কিছু কর্মচারী-কর্মকর্তা ব্যাতিক্রমও আছেন। তবে এই সংখ্যা খুব কম। সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেসরকারি ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানেও এখন দুর্নীতি গ্রাস করেছে। গণশুনানি খুব ভাল, কিন্তু যারা অভিযোগ করবে তাদের বিষয়ে কতটুকু নিরাপত্তা দেবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘এই অভিযোগ করার পর সামনা-সামনি প্রমাণ হলেও পরবর্তীতে এই নিয়ে আর ফলোআপ হয় না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পর্যবেক্ষণ বা আ্যাকশান নেওয়ার দরকার হলেও তা নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু দুদকের এই কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ও ফলোআপ না থাকায় অনেকটা পণ্ডশ্রম ও আইওয়াশ হিসেবে দেখছে জনগণ।

এদিকে দুর্নীতি বিরুদ্ধে দুদকের গণশুনানিকে পজেটিভভাবে দেখছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. সামশুদ্দোহা। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে সিটি করোপরেশনের বিভিন্ন বিভাগে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও কাজের জবাবদিহিতা বাড়বে।’

দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘গণশুনানি নতুন কিছু নয়, এটি এর আগে চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে ১০-১২টি গণশুনানি করা হয়েছে। এতে সুফলও পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আমরা চাই এটি ধারাবাহিকভাবে সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত রাখতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চেষ্টা করছি গণশুনানিকে আয়োজনের ম্যাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি এবং এটি কার্যকরি বাস্তবায়ন রুপে দাঁড় করানোসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!