রমজানে লিভার রোগীরা কী খাবেন

রমজানে শারীরিকভাবে সক্ষম সবাই রোজা রাখার চেষ্টা করেন। লিভারের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগিদের পবিত্র রমজান মাসে করণীয় সম্পর্কে আসুন জেনে নেই। প্রথমে জানবো লিভারের কোন রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন আর কারা পারবেন না।

১. একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং একিউট লিভার ফেইলার : হঠাৎ করে তীব্র জন্ডিসে আক্রান্ত ‘একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস’ এবং ‘লিভার ফেইলরের’ রোগিদের লিভারের কার্যক্ষমতা অত্যাধিক মাত্রায় কমে যাওয়ায় তারা রোজা রাখতে পারবেন না।

২. ফ্যাটি লিভার ডিজিজ যারা ফ্যাটি লিভারের রোগি, তাদের জন্য রোজা উপকারী হতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে উপবাসের সময় লিভার সেলের নানামুখী তৎপরতায় লিভারে ফ্যাট জমা হতে দেয় না। কাজেই অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস এবং অন্যান্য জটিল রোগ সাথে না থাকলে ফ্যাটি লিভারের রোগীরা রোজা রাখলে উপকৃত হবেন।

৩. ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস বি এবং সি ‘হেপাটাইটিস বি’ কিংবা ‘সি’ তে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী যাদের শারীরিক তেমন কোন অসুবিধা নাই এবং লিভার ফাংশন ভালো তারা রোজা করতে পারবেন। তবে যারা এই রোগের জন্য ঔষধ খাচ্ছেন তারা অবশ্যই যথারীতি ওষুধ চালিয়ে যাবেন।

৪. লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সার সাধারনভাবে জটিলতাবিহীন বা ‘কমপেনসেটেড লিভার সিরোসিস’-এর রোগীরা রোজা করতে পারবেন। কিন্তু যাদের জন্ডিস, পা কিংবা পেটে পানি আসা, রক্ত বমি কিংবা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ইতিহাস আছে তাদের জন্য রোজা রাখা ক্ষতিকর হতে পারে।
‘লিভার ক্যান্সারে’ আক্রান্ত কিন্তু লিভার ফাংশান মুটামুটি ভাল, এবং সোরাফেনিব ঔশধ খাচ্ছেন এমন রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন।

৫. লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট : এধরনের রোগীরা লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং তত্ত্বাবধানে রোজা রাজার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন কেমন হবে খাবার। যেমন

ক) ইফতার : ইফতারের সময় প্রচুর পানি এবং তরল খাবার, কম চর্বি যুক্ত এবং রসালো খাবার ও ফলমুল খাওয়া উচিত। কম তেলে ভাজা দু‘য়েকটি পেয়াজু, বেগুনি খেতে পারবেন। মাঝারি মাপের একটি জিলাপি এবং ছোট এক বাটি হালিম খেতে পারবেন। আর ইফতারের সময় একবারে বেশী না খেয়ে অল্প অল্প করে বার বার খেলে হজম ভাল হবে।

ক. পানীয় : পানি, দুধ, শরবত, ঘরে বানানো ফলের রস, সাথে অল্প পরিমাণ চিনি খেলে সারা দিনের রোজায় পানি শুন্যতা পূরণ হবে এবং তাৎক্ষণিক ভাবে সতেজ হবেন।

খ. খেজুর : ঐতিহ্যগতভাবে মুসলমানেরা খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙেন। খেজুরে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক চিনি এবং শক্তি, এ ছাড়াও রয়েছে পটাসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফাইবার- যা আপনাকে মুহূর্তেই চাঙ্গা করবে, লিভারের রোগিরাও প্রতিদিন ইফতারিতে ৩-৪ টি খেজুর খেতে পারবেন।

গ. ফল : যে কোন ধরনের ফল লিভারের রোগিরা খেতে পারবেন, যথেষ্ট পরিমাণ রসালো ফল খেতে পারেন তবে সাথে ডায়বেটিস থাকলে মিষ্টি ফল বেশি খাবেন না।

ঘ. সুপ : ভ্যাজিট্যাবল, চিকেন কিংবা কর্ণ যে কোন সুপ খেতে পারবেন।

খ) রাতের খাবার : ইফতারের পর রাতের খাবার হাল্কা হতে হবে। এ সময়ে আপনি ভাত অথবা রুটি অথবা পেস্তা, সাথে মুরগি, মাছ, সব্জি পরিমাণ মত খেতে পারবেন। এসময় ফ্যাটি লিভারের রোগিরা টক দই খেতে পারেন।

গ) সেহেরি : সেহেরিতে পরিমিত ভাত, রুটি, সব্জি, মাছ, মুরগি খেতে পারবেন। কম চর্বিযুক্ত দুধ এবং সাথে কলা খেতে পারবেন। এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ফাস্ট ফুড, গরু ও খাসির মাংশ (বিশেষত: লিভার সিরোসিস এবং ফ্যাটি লিভারের রোগিরা), বড় চিংড়ি, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত ঝাল খাবার, কোমল পানীয়।

৬. রমজানে ব্যয়াম: শারীরিকভাবে সক্ষম ক্রনিক হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার এবং লিভার সিরোসিসের কোন কোন রোগি ইফতারের পর সাধ্যমত হাল্কা ব্যয়াম কিংবা হাঁটাহাটি করতে পারবেন। সবশেষে: আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্যকর এবং পরিমিত খাবার এবং নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে লিভারের বিভিন্ন রোগিরা রমজানেও সুস্থ থাকতে পারবেন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, হেপাটোলজি (লিভার) বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!