বিপজ্জনক ওসিডির রোগী ছিলেন চট্টগ্রামের রেডিসনে মারা যাওয়া আরিফ, মৃত্যুর আগে শেষ কথা মায়ের সঙ্গে

মায়ের সঙ্গে অভিমান করে বাসা থেকে বের হয়ে গত ৯ নভেম্বর কক্সবাজারে চলে যান আরিফ কবীর (২৪)। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম নগরে ফিরে মায়ের সঙ্গে কথা বলার ৪ ঘন্টা পরেই রাত ৯টায় চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু হোটেলের ২০ তলা থেকে লাফিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার তাজমহল রোডের এনামুল কবিরের ছেলে আরিফ কবীর। গত ৮ নভেম্বর তিনি মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ওইদিন তিনি গুলশানে এক বন্ধুর বাসায় রাত কাটান। এরপর ৯ নভেম্বর তিনি চলে যান কক্সবাজারে।

সোমবার (১৫ নভেম্বর) সকালে কক্সবাজার থেকে মায়ের সাথে মোবাইলে কথা বলেন আরিফ। এরপর ঢাকা চলে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি ঢাকা আর যাননি। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আবারও হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় রাগারাগিও করেন আরিফ— পারিবারিক সূত্রে এমন কথা জানা যায়।

এর ঘন্টাখানেক পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি হোটেল রেডিসন ব্লুতে চলে আসেন। রাত ৯টার দিকে হোটেলের ২০ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন তিনি। এর পরপরই তার মৃত্যু হয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

জানা গেছে, আরিফ কবীর গত ১০ বছর ধরে ‘অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা ‘শুচিবাই’ রোগে ভুগছিলেন। অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার বা ওসিডি সাধারণত মানসিক স্বাস্থ্যকে আক্রান্ত করে। পাশাপাশি শারীরিকভাবেও ক্ষতি করে। যারা এ রোগে আক্রান্ত হয়, তারা ভয়াবহ মানসিক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। আক্রান্তরা একপর্যায়ে এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে চলে যায়, যখন তাদের জীবন নিয়েও সংশয় দেখা দেয়।

তিন ভাই-বোনের বড় ছিলেন আরিফ কবীর। প্রাইভেট স্কুল থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা হলেও পরবর্তীতে ঢাকার একটি স্বনামধন্য ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ও-লেভেলে পড়াশোনা শেষ করেন। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুলে এ-লেভেলের প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছিলেন।

চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার তদন্ত কর্মকর্তা চৌধুরী রেজাউল কবীর বলেন, মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সকালে আরিফ কবীরের মা চট্টগ্রামে আসেন। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে আরিফের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আরিফের মা ফারহানা দোজা ইভা জানান, ১০ বছর ধরে ‘অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) রোগে ভুগছিলেন তিনি। বাসায় মাঝে মাঝে অসংলগ্ন আচরণ করতেন। এসব নিয়ে মা-ছেলের মাঝে রাগারাগি হতো। তখন পরিবার তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ভয় দেখাতো এবং তাকে কাউন্সেলিং করানোও হয়। বিভিন্ন সময়ে পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করে বের হয়ে যেতো সে।

আরিফের মা পুলিশকে জানান, পরিবারের মা ও দাদার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হতো বেশি। মায়ের সঙ্গে অভিমান করে গত ৯ নভেম্বর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। সেই দিন কক্সবাজারে চলে গিয়েছিলেন আরিফ কবীর।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!