পায়েল খুনের ফয়সালা ১ নভেম্বর, করোনার বাহানায় বিচার ঠেকানোর চেষ্টা টেকেনি

দুই বছর পর অবশেষে আলোচিত পায়েল হত্যা মামলার রায় হতে যাচ্ছে ১ নভেম্বর। যুক্তিতর্ক শেষে রোববার (৪ অক্টোবর) এই তারিখ ঘোষণা করেছেন ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। একই দিন তিন আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিন শান্তর সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন সাইদুর রহমান পায়েল। কিন্তু ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ।

পায়েলের লাশ উদ্ধারের পরদিন ২৪ জুলাই তার মামা গোলাম সরওয়ার্দী বিপ্লব বাদী হয়ে হানিফ পরিবহনের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে ঢাকার আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে জামাল হোসেন ও ফয়সাল হোসেন সহোদর দুই ভাই। পায়েলকে খুন করার আদ্যোপান্ত জানিয়ে এদের দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে গত দু বছর আদালতের দ্বারে দ্বারে কাটিয়েছি। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের আমরা এখন শেষ পর্যায়ে। ১ নভেম্বর মামলার রায় দেবেন বলে আজ ঘোষণা দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক।’

মামলার পিপি আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল আদালতে চলা মামলাটির অনেক অগ্রগতি হয়েছিল। নয় জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আসামিপক্ষের আবেদনে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরে মামলাটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান খালিদ আদনান বলেন, ‘রোববার যুক্তিতর্কে অংশ নেন উভয়পক্ষের আইনজীবী। করোনার মিথ্যা অজুহাত দিয়ে তারা বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আদালত তাদের কোনো সুযোগ দেননি আর। জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়েছেন তিন আসামিকেই।’

সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে মামলার বাদি গোলাম সরওয়ার্দী বলেন, ‘গত বছরের ২১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে হানিফ পরিবহনের ভলবো বাসে করে ঢাকা রওনা দেয় পায়েল। পরদিন ২২ জুলাই ভোরে সে বাস থেকে প্রস্রাব করতে রাস্তায় নামে। কিন্তু বাসে ওঠার সময় দরজার সাথে ধাক্কা লেগে আহত হয় পায়েল। দায় এড়াতে চালক, সহকারী ও সুপারভাইজার মিলে আহত পায়েলের মুখ থেঁতলে দিয়ে নদীতে ফেলে দেয় তাকে।’

পায়েল হত্যামামলায় গজারিয়া থানা পুলিশ বাসের সুপারভাইজার জনি, চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আসামি করে গত ৩ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

পায়েল হত্যার পর তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আসাদুজ্জামান খান, বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের সাংসদ আফছারুল আমিন, এমএ লতিফ এবং সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতার সাথে সাক্ষাত করেন। এরপর তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করলে তিনি শাস্তি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আশ্বাস দেন।

বাদি গোলাম সরওয়ার্দী বলেন, মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচার কাজ শুরু হলে তা চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে স্থানান্তর করার জন্য মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করি আমরা। পরিবারের আবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে মামলাটি চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। ‘জনস্বার্থে’ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন ২০০২ এর ৬ ধারা অনুসারে আদেশটি দেওয়া হয়। এরপর থেকে চট্টগ্রামে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হয়।

২০১৯ সালের ২ এপ্রিল থেকে মামলাটি চট্টগ্রামের আদালতে কার্যক্রম শুরুর পর বাদী সরওয়ার্দী বিপ্লব, পায়েলের দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিন শান্ত, পায়েলের মা কোহিনূর বেগম, মামা ফাহাদ চৌধুরী দিপু ও ভাগ্নিপতি আইয়ুব আলী, গজারিয়া থানার এসআই ও পায়েলের সুরতহালকারী সফর আলী, পোস্টমর্টেমের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্য আসাদুজ্জামান, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক গাজীপুর জেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. সাখাওয়াত হোসেনসহ মোট নয়জন সাক্ষ্য দেন। কিন্তু মামলা চলাকালীন সময়ে গত ৯ জুন হঠাৎ করে চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার আদালতে চলা পায়েল হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রমের ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ নেন আসামিরা। পাশাপাশি মামলাটি কেন ঢাকায় স্থানান্তরিত করা করা হবে না তা চার সপ্তাহের মধ্যে জানাতে আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে জানাতে আদেশও দেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ শুরু হয় বিচার।

রোববার (৪ অক্টোবর) ছিল যুক্তিতর্ক। এটির শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। আর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেছেন আগামী ১ নভেম্বর।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!