দুর্নীতির অভিযোগের পরও দুদকের ‘ক্লিয়ারেন্সে’ চট্টগ্রাম রেলে আরএনবি কর্তার অবাক পদোন্নতি

চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলে থাকাকালীন পদোন্নতি পেতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নামে ‘ভুয়া ক্লিয়ারেন্স’ সনদ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) এক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এছাড়া সিপাহী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলায় চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত জামিনও নিয়েছেন তিনি।

আরএনবির ওই শীর্ষকর্তার নাম মোহা. আশাবুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে রেল পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট (চলতি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে ১৮৫ জন সিপাহী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেই নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মো. ইকবাল হোসেন ও সদস্যসচিব মোহা. আশাবুল ইসলামকে ডাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর থেকে সেই অভিযোগের অনুসন্ধান করে আসছিল দুদক। এছাড়া ওইসময় তার বিরুদ্ধে চার এসআই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগও অনুসন্ধান করে দুদক। কিন্তু সেটিতে কোনো সত্যতা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এরপর দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর নিয়োগ দুর্নীতিতে তাদের জড়িত থাকার সত্যতা পায় দুদক। ওই ঘটনায় দুদকের উপ-পরিচালক সিরাজুল হক গত ২৮ আগস্ট রেলের পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আশাবুলসহ চারজন ঢাকার উচ্চ আদালত হতে ছয় সপ্তাহের অস্হায়ী জামিন নেন। পরে গত ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান।

মামলার আসামিরা হলেন নিয়োগ কমিটির সদস্য বর্তমানে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মো. জহিরুল ইসলাম, নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব বর্তমানে আরএনবি পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মোহা. আশাবুল ইসলাম, নিয়োগ কমিটির সদস্য বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব ফুয়াদ হাসান পরাগ, নিয়োগ কমিটির সদস্য সাবেক সিস্টেম প্রোগ্রাম অফিসার (এসপিও, বর্তমানে অবসরে) মো. সিরাজ উল্যাহ এবং নিয়োগ অনুমোদনকারী পূর্ব রেলের সাবেক জিএম সৈয়দ ফারুক আহমেদ।

এদের মধ্যে জহিরুল ইসলাম সেসময় আরএনবির ঢাকা বিভাগের কমান্ড্যান্ট, আশাবুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিভাগের কমান্ড্যান্ট এবং ফুয়াদ হাসান পরাগ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের কমান্ড্যান্ট পদে কর্মরত ছিলেন।

এছাড়া পূর্ব রেলের আরএনবির সাবেক চিফ কমান্ড্যান্ট ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তিনি মারা যাওয়ায় মামলায় তার নাম রাখা হয়নি।

কিন্তু এরমধ্যে দুদকের অনুসন্ধান চলাকালীন সময়ে ‘দুদকে কোনো অভিযোগ বা মামলার তদন্ত চলমান নেই’ মর্মে ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ক্লিয়ারেন্স সনদ নেন আশাবুল। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, কোনো অভিযোগ বা মামলা তদন্তে থাকলে ক্লিয়ারেন্স দেয় না দুদক। এরপরও দুদকের সনদ দেখিয়ে ৯ম গ্রেডের সহকারী কমান্ড্যান্ট থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডে কমান্ড্যান্ট পদে উন্নীত হন আশাবুল। তার এই ক্লিয়ারেন্স সনদটি ভুয়া বলে অভিযোগ তোলেন আরএনবির এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্লিয়ারেন্স সনদটিই ভুয়া। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।’

এদিকে ভুয়া ক্লিয়ারেন্স সনদের বিষয়টি অস্বীকার করে চিফ কমান্ড্যান্ট (চলতি) আশাবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে পদোন্নতি নয়, চলতি দায়িত্বে চিফ কমান্ড্যান্ট (পশ্চিম) করা হয়েছে।’

এছাড়া নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আরেক আসামি জহিরুল ইসলাম ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কমান্ড্যান্ট (ঢাকা) থেকে চিফ কমান্ড্যান্ট হন। পদোন্নতির চারদিনের মাথায় চিফ কমান্ড্যান্ট (পূর্ব) হিসেবে পদায়িত হন। এ জায়গায় দীর্ঘ ২বছর ৮ মাস তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ২০২১ সালের ৩১ মে অনিয়মের অভিযোগে তাকে রাজশাহী বদলি করা হলেও সেই বদলির আদেশ স্থগিত করান তিনি। দুদকের মামলার পরও সপদে বহাল আছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে জহিরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘দুদকের অভিযোগ তদন্ত চলাকালীন সময়ে কোনো ক্লিয়ারেন্স বা দায়মুক্তি দেওয়ার নজির আছে বলে আমার জানা নেই। দুদক ওই মামলার জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন জানাবে।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ট্রেনে আছেন বলে জানিয়ে ফোন কেটে দেন।

রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের দুই চিফ কমান্ড্যান্টের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না, জানতে চাইতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, ‘এ বিষয়ে জেনে বলতে পারবো।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!