দু’বছর ধরে একই বৃত্তে বন্দি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র রেজাউল, দলের কর্মসূচিতে অনীহা

দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকার দীর্ঘ অভিযোগের পরেও নিজ এলাকায় শান্তি এবং উন্নয়ন সমাবেশে আসতে পারেননি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বিকালে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ৪, ৫, ৬, ৮, ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ  অনুষ্ঠিত হয়। নিজের ঘরের পাশের সমাবেশেই মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ছিলেন অনুপস্থিত ছিলেন।

অথচ সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ মহানগর, থানা ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনের প্রস্তুতি ও দলের জন্য নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শানিয়ে নিতে দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে সমাবেশ, মিছিলে-স্লোগানে গর্জে উঠেছে। কিন্তু এমন সময়ে কেন দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার দেখা মিলছে না, তা নিয়ে নানা মহলে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

এমন নিষ্ক্রিয়তার কারণ কি, জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রেজাউল করিম চৌধুরী প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করেন।

এর আগে গত ২৬ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে আলোচনা সভা আয়োজন করে চান্দগাঁও থানা আওয়ামী লীগ। মেয়রের বাড়ির থেকে অল্প দূরের বহদ্দারহাট মোড়ের সভায় বিশেষ অতিথি করা হলেও উপস্থিত হননি তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে হওয়া অধিকাংশ দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না মেয়র রেজাউল। এর আগে ২০২২ সালের বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি, ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, মুজিবনগর দিবস, ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ৬ দফা দিবস, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, শেখ হাসিনার কারাবরণ দিবস, শেখ হাসিনার কারা মুক্তি দিবস, শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদ সমাবেশ, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ কর্মসূচি, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ১৪ আগস্টের আলোচনাসভায় উপস্থিত হননি রেজাউল করিম চৌধুরী।

এমনকি ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতেও অংশ নেননি তিনি।

তারও আগে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএ রশিদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভা, ৭ নভেম্বর গণতন্ত্র হত্যা দিবসের আলোচনা সভা, ৬ নভেম্বর, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ইদরিস আলমের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভা, ৫ নভেম্বর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’, ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণ সভা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় জেল হত্যা দিবসের স্মরণসভা–কোনোটাতে দেখা যায়নি রেজাউলকে।

একইভাবে ৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য চৌধুরী এন জি মাহমুদ কামালের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভা এবং ১৯ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিনে নগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায়ও যোগ দেননি মেয়র রেজাউল।

শুধু তাই নয়, ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর ৩১ নম্বর আলকরন ওয়ার্ডের চারবারের কাউন্সিলর, নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য তারেক সোলায়মান সেলিমের স্মরণসভায়ও ছিলেন না রেজাউল করিম চৌধুরী। অথচ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদের মতো নেতারা ওই স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন।

আরএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!