দালালের মাধ্যমে শাহপরী’র তিন পয়েন্ট দিয়ে ঘটছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

এস এম আরোজ ফারুক, কক্সবাজার ॥

টেকনাফের শাহপরী দ্বীপের মিস্ত্রীপাড়া গুলাপাড়া ঘাট, জেটি ঘাট ও জালিয়া পাড়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিনই অবৈধ অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে ঢুকে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে গিয়ে বসবাস শুরু করছে। তবে এসব পয়েন্টে বিজিবি’র কড়া নজরদারি রয়েছে বলে জানা গেছে।

দালালের মাধ্যমে শাহপরী’র তিন পয়েন্ট দিয়ে ঘটছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ 1
জালিয়া পাড়ার এই ঘাট দিয়ে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে প্রতিদিন অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশের পার্শবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার কারনে দলে দলে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টায় রয়েছে অনেকে ঢুকেও পড়ছে। উখিয়া-টেকনাফের সীমান্তে বিজিবি’র কড়া নজরদারীর মধ্যেও বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা।

 

প্রতিনিয়ত টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারি রোহিঙ্গাদের আটকের পর মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে বিজিবি। কিন্তু ফেরত পাঠানো রোহিঙ্গারা কৌশলে আবারো টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে ভীড় করছে নানান কৌশলে। ফের ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে। তারা কিছুতেই যেতে চাইছে না মিয়ানমারে। রাতের আঁধার হওয়ায় কারা পুনরায় বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা করছে তাও বুঝা যাচ্ছে না বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে। তার পরও তারা রোহিঙ্গা প্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

 
মায়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তের বিশাল একটি অংশজুড়ে রয়েছে জলপথ তাই রোহিঙ্গারা এক্ষেত্রে নাফ নদী ব্যবহার করছে। তারা ওপাড়ের এবং এপাড়ের কিছু দালালদের সহযোগিতায় খুব সহজেই এদেশে ঢুকে পড়ছে। শাহপরী দ্বীপের স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সথে কথা বলে জানাযায়, স্থানীয় কিছু দালাল প্রতিদিন তাদের নিজস্ব ট্রলারে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। এক্ষেত্রে যাদের ট্রলার নেই তারা ওপাড় থেকে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দায়িত্বে টাকার বিনিময়ে প্রবেশ করাচ্ছেন।

 

দালালের মাধ্যমে শাহপরী’র তিন পয়েন্ট দিয়ে ঘটছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ 2
জালিয়া পাড়ার এই ঘাট দিয়ে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে প্রতিদিন অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহপরী দ্বীপ গুলাপাড়া এলাকার মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে কবির আহমদ প্রকাশ কবিরা, দক্ষিণপাড়ার মৃত বশির উল্লাহর ছেলে রহমত উল্লাহ, মিস্ত্রীপাড়া এলাকার মৃত হাসেমের ছেলে লম্বা সলিম, একই এলাকার এনায়েত উল্লাহ ও মোঃ ইব্রাহিমসহ বেশ কিছু দালাল রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সাথে জড়িত রয়েছে।

 

তারা মূলত টেকনাফের শাহপরী দ্বীপের গুলারপাড়া ঘাট, জেটি ঘাট ও জালিয়াপাড়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিনই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। সূত্রমতে তারা দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারের সাথে জড়িত। সাগর পথে বিভিন্ন সময় বহু মানুষকে মালয়শিয়া পাঠিছে। বর্তমানে তারা মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করানো শুরু করেছে। তারা এসব রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন আনরেজিস্ট্রি ক্যাম্পে আশ্রয় দিচ্ছেন।

 

গুলারপাড়া ঘাট, জেটি ঘাট ও জালিয়াপাড়া ঘাটগুলোতে বিজিবি’র নজরদারি আরো বাড়িয়ে এসমস্ত দালালদেরকে আটকের আওতায় আনা দরকার বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

 
একটি সূত্রে জানা গেছে, শাহ পরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়া ঘাট নিয়ন্ত্রণ করে শামশুল আলম প্রকাশ শামীম। দালালদের মধ্যে রয়েছে, জালিয়া পাড়ার কাদির হোছেন প্রকাশ বাট্টা কাদির, ইয়াছের, সলিম প্রাকাশ সট সলিম, নুর মোহাম্মদ মাঝি, রাতে রোহিঙ্গাদের মাঝির বাড়ীতে এনে জমায়েত করার হয়। এছাড়াও মিস্ত্রীপাড়া মোঃ ইউসুফ, মোঃ জাফর, রশিদ আমিন, জেটিঘাটের মোঃ ইউসুফ ও জিয়া উদ্দিনও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার কাজে জড়িত বলে জানা গেছে।

 
টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, টেকনাফ সীমান্তের সবগুলো পয়েন্টে আমাদের বিশেষ নজরদারী রয়েছে। রোহিঙ্গা প্রতিহত করতে বিজিবি সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।

 

বুধবার সারাদিনে হোয়াইক্যং, হ্নিলা ও জিমংখালী সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ৫টি রোহিঙ্গা বোঝায় নৌকা প্রতিহত করে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শাহপরী দ্বীপে দালালদের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের গোয়েন্দার মাধ্যমে তাদের ধরার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে স্থানীয়দের সুনির্দিষ্ট তথ্য ও সহযোগিতা দরকার।

 

এ এস / জি এম এম / রাজীব প্রিন্স :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!